সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

পার্লামেন্টে নয়া মানচিত্র বিল পেশ করল নেপাল

পার্লামেন্টে নয়া মানচিত্র বিল পেশ করল নেপাল

ভারত-নেপাল সীমান্তের তিনটি এলাকা নিজের বলে দাবি করে প্রকাশ করা নয়া মানচিত্র নিয়ে বিল বুধবারেই পার্লামেন্টে পাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন বিরোধীদের চাপে সেই বিল পেশ করেনি প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকার। এ বিল না পাস করতে তীব্র চাপ দিচ্ছে ভারত। কিন্তু সেই বিরোধিতা ও দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের আবহেই গতকাল নেপালের পার্লামেন্টে পেশ হয় ‘ম্যাপ আপডেট বিল’। নতুন মানচিত্রে ভারত-নেপাল সীমান্তের লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখকে নেপালের অংশ বলে দাবি করা হয়েছে। এ বিল উত্থাপনে অবশেষে সাহস জুগিয়েছে বিরোধী দলও। ফলে বিল উচ্চ কক্ষে পাস হয়ে যাওয়া এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। আর সেটা হলে অবধারিতভাবেই নয়াদিল্লি-কাঠামান্ডু সঙ্ঘাত আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছেন দুই দেশের বহু কূটনৈতিক। নেপালের সংবিধান অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনী বিলে দুই তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন দরকার হয়। তাই সব দিক মেপে এগোতে চাইছিল কেপি শর্মা ওলি সরকার এবং তার দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি। সে কারণেই প্রথম দফায় বুধবারের বিল পেশের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শনিবার নেপালের প্রধান বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর ‘নতুন মানচিত্র’ বিলকে সমর্থনের বার্তা দেয়। এর পরই গতকাল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এ এ বিল পেশ করেছেন নেপালের আইনমন্ত্রী শিব মায়া তুম্বাহাম্ফি। যদিও এই বিলে ছোট কয়েকটি বিরোধী দলের সমর্থন নেই। তবে নেপালি কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ায় সেটা আর সমস্যা হবে না। ফলে নেপাল পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতেও পাস হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।

লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ নিয়ে ভারত-নেপাল বিবাদ দীর্ঘদিনের। ভারতের দাবি, এ তিনটিই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং উত্তরাখন্ড রাজ্যের পিথোরাগড় জেলার অন্তর্ভুক্ত। উল্টো দিকে নেপালও বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে ওই এলাকাগুলো তাদের। কিন্তু সেই বিবাদ চরমে ওঠে সম্প্রতি উত্তরাখন্ডের গাটিয়াবর্গ থেকে লিপুলেখ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু করার পর। মূলত মানস সরোবর পর্যন্ত তীর্থযাত্রা আরও সুগম করতে উত্তরাখন্ড থেকে লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ওই ৮০ কিলোমিটার রাস্তার তৈরির কাজ করে ভারত। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় নেপাল। ওই সড়ক দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত বলে আগেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কাঠমান্ডু। এবার পরিস্থিতি আরও জটিল করে কয়েক দিন আগে ভারত-নেপাল সীমান্তে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার কথা জানিয়েছিলেন প্রদীপ গিয়াওয়ালি। তার দাবি, নেপালের জমিতে সড়ক তৈরি করে ভারত দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ১৮১৬ সালে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের তৎকালীন রাজার মধ্যে স্বাক্ষরিত সুগাউলি চুক্তিতে সাফ বলা হয়েছে, মহাকালী নদীর পূর্বের অংশ নেপালের। ১৯৮৮ সালের বৈঠকেও ভারত স্থায়ী সীমান্ত মেনে চলতে রাজি হয়েছিল। ওই নতুন সড়ক তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে নেপালের ভূমি মন্ত্রণালয় ব্যবস্থাপনা দেশের সংশোধিত নতুন ম্যাপ প্রকাশ করে। ম্যাপ প্রকাশের পরেই তীব্র বিরোধিতা করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেয়, ‘এই একপাক্ষিক কার্যক্রম ঐতিহাসিক ঘটনা ও প্রমাণসাপেক্ষ নয়। কৃত্রিমভাবে দেশের সীমান্ত এভাবে বাড়িয়ে দেওয়াকে ভারত কোনোভাবেই মেনে নেবে না। ম্যাপ আপডেট বিল নেপালের পার্লামেন্টে পেশের জল্পনার মধ্যেও বৃহস্পতিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’ কিন্তু ভারতের তীব্র আপত্তি নেপালকে থামাত পারল না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর