শনিবার, ৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ল্যানসেট থেকে সরল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট

ল্যানসেট থেকে সরল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট

করোনায় কুপোকাত গোটা বিশ্ব। প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত করোনার উত্তাল ঢেউ থেকে বাঁচতে খড়কুটো ধরে রক্ষার চেষ্টা চলছে। আপাতত এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে অন্যতম ওষুধ ম্যালেরিয়ার জন্য ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ। আমেরিকায় কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর এই ওষুধের ফ্যান হয়ে যান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু চিকিৎসকদের একটা অংশ এ ওষুধ ব্যবহারের পক্ষপাতী নন। গত সপ্তাহে তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক করোনায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারই নিষিদ্ধ করে দেন। এই দুই দিন পরে চিকিৎসকদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। গত পরশু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দেয়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে বিখ্যাত স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন ল্যানসেটের একটি প্রতিবেদন। সেখানে ছোট্ট একটা তথ্যের ভুল। আর তাতেই রীতিমতো ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল, করোনা চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওষুধ প্রয়োগে কোনো ফলই নাকি মিলছে না। ল্যানসেট জার্নালে এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা রুখতে এই ওষুধের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু গতকাল যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে মাথায় হাত অনেকেরই। ওই গবেষণাপত্রের তিন গবেষকই বলছেন, যে সংস্থার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ওরা রিপোর্ট বানিয়েছিলেন, তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। এমনকি ল্যানসেট জার্নাল থেকে সেই গবেষণাপত্রও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য তার আগে তড়িঘড়ি নিজেদের ভুল শুধরে করোনা সারাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে সায় দিয়েছে স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে কেন এমন ভুল হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ৯৬ হাজার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ল্যানসেট।

 তাতে বলা হয়েছিল, করোনা সারাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কোনো ভূমিকা নেই। উল্টো হাসপাতালে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু এখন কার্যত উল্টো সুর গবেষকদের গলায়। এই গবেষণাপত্রের মূল কারিগর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনদীপ মেহরা, জুরিখের ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ফ্রাঙ্ক রাসচিজকা ও ইটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিত প্যাটেল নিজেদের গবেষণার তথ্য নিয়েই ধন্দে রয়েছেন। তারা তৃতীয় কোনো সংস্থাকে দিয়ে সেই তথ্য ফের একবার যাচাই করে দেখতে চাইছেন। আর এই বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ায় অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে শিকাগোর এক স্বাস্থ্য সমীক্ষা সংস্থা সারজিস্ফিয়ারের দিকে। তারা নিজেদের তথ্য যাচাই করতে দিতে রাজি নয়। এর পরই ল্যানসেট জার্নাল থেকে ওই গবেষণাপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই তিন গবেষকের কথায়, ‘ওই সংস্থার তথ্য যাচাইয়ে আপত্তি করার পরই গবেষণাপত্র সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। কারণ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে চাই না আমরা।’ কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেন শিকাগোর সংস্থাটি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিল। স্রেফ ভুল করে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে।

সর্বশেষ খবর