বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চরম খাদ্য সংকটের দ্বারপ্রান্তে গোটা বিশ্ব : জাতিসংঘ

চরম খাদ্য সংকটের দ্বারপ্রান্তে গোটা বিশ্ব : জাতিসংঘ

অ্যান্তোনিও গুতেরেস

করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্ব বড় ধরনের খাদ্য সংকটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ আভাস দিয়ে বলেছেন, অন্তত গত ৫০ বছরের মধ্যে এমন খাদ্য সংকটের নজির বিশ্বে আর দেখা যায়নি। আসন্ন এ বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর দ্য গার্ডিয়ান

মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দায় দরিদ্ররা তাদের মৌলিক পুষ্টিচাহিদা থেকেও বঞ্চিত হতে চলেছে। অবিলম্বে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, বিশ্বের লাখ লাখ পূর্ণবয়স্ক মানুষ ও শিশুকে এক ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে হবে। আসন্ন এ ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর বিপর্যয়পূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা যে বিষয় নিয়ে আতঙ্কিত থাকেন, সেই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও সংরক্ষণবাদ নীতির প্রয়োগ এখন পর্যন্ত বড় আকারে ঠেকানো গেছে। তারপরও বড় ধরনের খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। মহাসচিব গুতেরেস বলেন, ‘এমনকি খাদ্য সমৃদ্ধ দেশগুলোতেও আমরা খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছি।’ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারীর কারণে এ বছর প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে আছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দরিদ্র শিশুদের ন্যূনতম পুষ্টিচাহিদা এখন মেটানো না গেলে জীবনভর তাদেরকে ভুগতে হবে। বিশ্বে বর্তমানে প্রতি ৫ জনে একজন শিশুর বয়স পাঁচ বছর হতে না হতেই তাদের বিকাশ থমকে যায়। দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে নতুন করে আরও লাখ লাখ শিশুকে এমন নিয়তি বরণ করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্বের নাজুক খাদ্য ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তিন দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন গুতেরেস। সেগুলো হলো ১. সবচেয়ে সংকটপূর্ণ এলাকাগুলোকে খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া, খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে উদ্বুদ্ধ করা। ২. সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দৃঢ় করা, যেন শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী এবং খাদ্য ঝুঁকিতে থাকা অন্য মানুষরা পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়। এবং ৩. ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করা যেন মহামারী থেকে মুক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশগতভাবে টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থার প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ম্যাক্সিমা টরেটো বলেন, বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থা এমন ধরনের হুমকিতে আছে যা সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেখা যায়নি।  মহামারী ও লকডাউনের কারণে মানুষের  চাষাবাদ, খাদ্য ক্রয় ও বিক্রির সক্ষমতা ব্যাহত হয়েছে। টরেটো সাবধান করে বলেন, ‘আমাদেরকে  সতর্ক হতে হবে। আমরা যে খাদ্য সংকটগুলো দেখেছি তার চেয়ে এটি অনেকখানি আলাদা।’    

সর্বশেষ খবর