শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

অর্থনীতিতে নেতৃত্ব হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

এশিয়ার এ পরাশক্তি বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তারা কী করতে সক্ষম। চীনের এ দাপট চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বদলে যেতে পারে বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিধারা

অর্থনীতিতে নেতৃত্ব হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মাস ছয়েকও হয়নি। তার মধ্যেই পৃথিবী তার চরিত্র বদলেছে। প্রকৃতির ওপর মানুষ তার অত্যাচার কমিয়ে দিয়েছে আর এ কারণে প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলতে শুরু করেছে। সমুদ্রের তীরে তীরে খেলা করছে ডলফিনসহ সামদ্রিক প্রাণী। সমুদ্রতটে ভয়-সংকোচহীন অবস্থায় ডিম পাড়ছে কচ্ছপ-কুমির। সেই ডিম থেকে বাচ্চাও ফুটে খেলা করছে সমুদ্র তীরে। কিন্তু মানুষ তার সহজাত অভ্যাস থেকে সরে যাচ্ছে। জীবন এবং জীবিকার চালিকা যাকে বলা হয় সেই অর্থনীতি গতি হারিয়ে ফেলেছে। অর্থনীতির বিশ্বখ্যাত পত্রিকা অর্থনীতির এই গতিধারা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে সংবাদ মাধ্যমটি বলেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্ব অর্থব্যবস্থার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আসা বিপর্যয়ে বদলে যেতে পারে এ ব্যবস্থা। অর্থনীতির ইতিহাসে শুরু হতে পারে এক নতুন অধ্যায়ের। করোনা মহামারী দেখিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দেশের ভিতরের সমস্যাই ঠিকমতো সমাধান করতে পারছে না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে তাদের বৈশ্বিক নেতৃত্ব নিয়ে। আর যুক্তরাষ্ট্রের এমন দুর্বলতম অবস্থার সুযোগ নিতে যাচ্ছে চীন। বেইজিং হয়তো রাতারাতি ওয়াল স্ট্রিটের সমকক্ষ হতে পারবে না। তবে এশিয়ার এ পরাশক্তি বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তারা কী করতে সক্ষম। চীনের এ দাপট চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বদলে যেতে পারে বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিধারা।

দীর্ঘদিন ধরেই বৈশ্বিক অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ তারা। বৈশ্বিক অর্থনীতির চার ভাগের এক ভাগই তাদের দখলে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের হিসাব হয় মার্কিন ডলারে। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার ৮০ শতাংশেই ডলার ব্যবহৃত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতার বিশাল এক অংশ ধরা রয়েছে ওয়াশিংটনের হাতে। অর্থের প্রবাহ যাদের নিয়ন্ত্রণে, দিন শেষে তারাই রাজা হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে করোনা মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার সিংহাসনে ভাগ বসাতে চলছে চীন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনা, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। ধীরে ধীরে সেই জায়গাটাই দখল করতে যাচ্ছে চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি তাদের। ১০ বছর ধরেই চীনের ব্যাংক খাত এগিয়ে চলেছে স্থিরভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর অবস্থা স্থিতিশীল, ইউরোপের ব্যাংকগুলোর সম্পদ কমছে, সেখানে বিপরীত গতিতে চীনা ব্যাংকগুলো। তাদের সম্পদ এখন ইউরোপ-আমেরিকার ব্যাংকগুলোর চেয়েও বেশি। তবে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এখনো অনেকটাই চীনকেন্দ্রিক। আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাত্র ৭ শতাংশ রয়েছে চীনা ব্যাংকের হাতে। ফলে বিপুল সম্পদ সত্ত্বেও বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারায় তাদের ততটা প্রভাব নেই। তবে এ দৃশ্য পাল্টাতে শুরু করেছে। চীনের ব্যাংকগুলো বাইরের দেশেও কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করেছে। বিশ্ববাজারে নিজেদের মুদ্রার গুরুত্বও বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউয়ানে লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করছে তারা। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মাইনিং কোম্পানি রিও টিন্টো গত বছর প্রথমবারের মতো তাদের চুক্তি ইস্যু করেছে ইউয়ানে।

করোনা মহামারীর কারণে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব আরও বাড়ছে। বিশ্বের সঙ্গে মহামারী নিয়ন্ত্রণে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে, বিভিন্ন দেশে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকরণ পাঠাচ্ছে তারা। ইতালিকে ৩০ টন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, স্পেনকে পাঁচ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক পাঠিয়েছে চীন। উহানে সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে অন্যতম নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন।

সর্বশেষ খবর