বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ভারত-নেপাল বিরোধের নেপথ্যে

ভারত-নেপাল বিরোধের নেপথ্যে

সীমান্ত ইস্যুতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং নেপালের মধ্যে চলছে টানাপড়েন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত ৮ মে যখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চীনের তিব্বত সীমান্তের লিপুলেখের সঙ্গে সংযুক্তকারী ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন তখন তিনি হয়তো ধারণাও করেননি যে, এ নিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিবেশী নেপালের সঙ্গে এত বড় সংকট তৈরি হবে। রাস্তাটি উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে নেপাল। দেশটি জানায়, যে এলাকার মধ্য দিয়ে এই রাস্তাটি গেছে, তার অনেকটাই তাদের। কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই জায়গার ভিতর দিয়ে ভারতের এই রাস্তা তৈরি তারা কখনই মানবে না। নেপাল সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলের কাছে তাদের পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে। কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানায়। এরপরও ভারতের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে গত শনিবার নেপালের সংসদের নিম্নকক্ষ দেশের নতুন একটি মানচিত্র অনুমোদন করেছে, যেখানে কালাপানি নামে পরিচিত প্রায় চারশো বর্গ কিলোমিটারের ওই পাহাড়ি এলাকাটিকে তাদের এলাকা বলে দেখানো হয়েছে। ভোটাভুটিতে নেপালের একজন এমপিও নতুন মানচিত্রের বিপক্ষে ভোট দেননি। এমনকি বরাবর ভারতপন্থি হিসেবে পরিচিত নেপালি কংগ্রেসের এমপিরাও নতুন মানচিত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিস্মিত ভারতের আঙ্গুল চীনের দিকে : ঐতিহাসিকভাবে অনুগত এই প্রতিবেশীর এসব প্রতিক্রিয়ায় ভারতে তৈরি হয়েছে বিস্ময় এবং উদ্বেগ। ভারতে অনেকের কাছে প্রশ্ন হচ্ছেÑ ‘এত বড় পদক্ষেপ কেন এখন নেপাল নিচ্ছে? সড়কটি তো রাতারাতি তৈরি হয়নি, নেপাল তো অনেকদিন ধরেই দেখছে যে ভারত সড়কটি তৈরি করছে।’ ভারতের  সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে তো সরাসরি বলেই ফেলেছেন  যে, তৃতীয় একটি দেশ হয়তো নেপালকে উসকে দিয়েছে। চীনের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করেছেন তিনি। ভারতের অনেক পর্যবেক্ষকও একইরকম সন্দেহ করছেন।

চীন কি আসলেই এই বিরোধে আগুন দিচ্ছে : নেপালকে কি কেউ উসকাচ্ছেÑ সে সম্ভাবনাও শতভাগ উড়িয়ে দিচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক কনস্টানটিনো হাভিয়ের। প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ একটি প্রকাশনায় এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘যদিও নেপাল দাবি কওে যে, তারা ৯০-এর দশক  থেকে বিতর্কিত এলাকাটির সমাধান নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, চীন কাঠমান্ডুকে বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থান শক্ত করতে পরোক্ষভাবে হলেও উৎসাহিত করছে না।’ তিনি বলেন, ‘তারপরও প্রধানমন্ত্রী অলিকে এখনই ‘চীনপন্থি’ বলে আখ্যা দেওয়া সঙ্গত হবে না এবং চীন আদৌ পেছন থেকে কোনো কলকাঠি নাড়ছে কিনা তার কোনো প্রমাণ এখনো নেই।’ চীন এখনো পর্যন্ত তাদের তিব্বত সীমান্তে ‘কালাপানি-লিপুলেখ-লিঙ্গুয়াধারা’ অঞ্চল নিয়ে নেপাল-ভারত বিরোধ নিয়ে কোনো কথা বলেনি।

কী বলছে নেপাল : তবে কালাপানির মালিকানা নিয়ে ভারত ও নেপালের বিরোধ হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়নি। এ বিষয়ে  নেপালের ভাষ্য, ?‘তারা ৯০-এর দশক থেকেই ভারতের কাছে এই এলাকাটি নিয়ে কথা বলতে চাইছে। এমনকি ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিও নেপাল সফরের সময়েও এটি তারা আলোচনার এজেন্ডায় রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু ভারত সবসময় তা পাশ কাটিয়ে গেছে।’ নেপাল দাবি করে, ১৮১৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এক চুক্তি অনুযায়ী কালি নদীর পূর্বাঞ্চল তাদের। কিন্তু ভারত সবসময় কালি নদীর উৎস এবং তার নদীর প্রবাহ বদলে যাওয়াসহ ওই অঞ্চলের ওপর তাদের অধিকার নিয়ে নানা প্রমাণ হাজির করেছে। তাছাড়া, ভারত গত ৬০ বছর ধরেই এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেখানে তাদের সেনা মোতায়েন রয়েছে। বহু অবকাঠামো তৈরি করেছে তারা। বিবিসি

সর্বশেষ খবর