সোমবার, ২২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

টিকা ছাড়াই শেষ হয়ে যেতে পারে করোনা

টিকা ছাড়াই শেষ হয়ে যেতে পারে করোনা

অধ্যাপক মাত্তেও বাসেত্তি

ইতালির সান্তা মারিয়া মিসারিকোর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সংক্রমণ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাত্তেও বাসেত্তি। যিনি করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরুর পর থেকে এর গতি-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন করোনাভাইরাস আর ‘বাঘ’ নয় বরং ‘বাঘ’ থেকে বন্য ‘বিড়ালে’ পরিণত হয়েছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস (কভিড-১৯)। ভাইরাসটি নিজ থেকেই শেষ হয়ে  যেতে পারে। এর প্রতিরোধের জন্য টিকার প্রয়োজন না-ও লাগতে পারে। তিনি গত পরশু ইতালির দ্য সানডে টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গত মাসজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকটতা হ্রাস পেয়েছে। বেশিরভাগ করোনা রোগীই এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন, মারা যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, করোনা রোগীদের সংখ্যা কমে যাওয়ার মানে হতে পাওে যে, ভাইরাসটির পুনরুত্থান ঠেকাতে আর টিকার প্রয়োজন নেই।

অধ্যাপক বাসেত্তি বলেন, ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার ধারণা, ভাইরাসটির তীব্রতায় পরিবর্তন আসছে। গত মার্চ ও এপ্রিলের শুরুর দিকে এর আচরণ পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। ইমার্জেন্সিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা খুবই কঠিন ছিল। তাদের অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশনের দরকার পড়ত। কারও কারও নিউমোনিয়াও হয়ে যেত। তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাদের দাবি, করোনাভাইরাস যে তার বিধ্বংসী চরিত্র হারিয়েছে তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।  তবে বাসেত্তি বলেন, গত চার সপ্তাহ ধরে প্যাটার্ন-ভিত্তিতে এই চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টের ওপর কম চাপ ফেলছে। এটা হয়তো ভাইরাসটির ভিতওে কোনো জেনেটিক মিউটেশনের কারণে হতে পারে, যা এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। এ ছাড়া, আমরা এখন রোগটি সম্পর্কে আগ থেকে বেশি সচেতন ও সামলাতে সক্ষম হয়ে উঠেছি।

মার্চ ও এপ্রিলের দিকে করোনাভাইরাসের আচরণ ‘আগ্রাসী বাঘের’ মতো ছিল বলে বর্ণনা করেন বাসেত্তি। তিনি বলেন, কিন্তু এখন সেটা বন্য বিড়ালে পরিণত হয়েছে। এমনকি, ৮০-৯০ বছরের বৃদ্ধরাও এখন বেডে উঠে বসতে পারছেন,  কোনো সাহায্য ছাড়াই শ্বাস নিতে পারছেন। পূর্বে এ ধরনের  রোগীরা দুই থেকে তিন দিনের মাথায় মারা যেত। বাসেত্তির ধারণা, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখন ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং লকডাউন, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় গুরুতর রোগীর সংখ্যা কমেছে। এসব কারণে, ভাইরাসটির মধ্যে জেনেটিক বিবর্তন হতে পারে। তবে ঠিক কী কারণে ভাইরাসটির আচরণে এমন পরিবর্তন এসেছে তা এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।

ভাইরাসটি টিকা ছাড়াই বিদায় নিতে পারে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাসেত্তি। তিনি বলেন, হ্যাঁ, হয়তো কোনো টিকা ছাড়াই ভাইরাসটি পুরোপুরি বিদায় নেবে। সংক্রমণের সংখ্যা কমছে। এতে ভাইরাসটি নিজ থেকেই শেষ হয়ে যেতে পারে। ব্রিটেনের ক্যান্সার সেবাপ্রদানকারী রুথারফোর্ড হেলথের প্রধান মেডিকেল অফিসার ও অনকোলজিস্ট অধ্যাপক কারল সিকোরা বলেন, এমনটা হওয়া সম্ভব যে, ব্রিটিশ জনগণের মধ্যে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে আগের চেয়ে বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতার হার বেড়েছে। হয়তো ভাইরাসটি নিজ থেকেই শেষ হয়ে যেতে পারে।

তবে ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার জ্যেষ্ঠ ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডা. ভারত পাঙ্খানিয়া বলেন, করোনা নিজ থেকে বিদায়  নেবে এমন আশা স্বল্পমেয়াদি। আমি মনে করি না, ভাইরাসটি এত জলদি চলে যাবে। যদি আক্রান্ত করার মতো  কেউ না থাকে তাহলে চলে যাবে। যদি আমাদের কাছে একটি সফল টিকা থাকে তাহলে আমরা বসন্ত রোগ প্রতিরোধে যেমনটা করেছি, তেমনটা করতে পারব। কিন্তু এই ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক ও এটির বিস্তার বিস্তৃৃত। এই ভাইরাস অনেকদিন থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর