বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ড এবং নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ল

বাইরের দেশ থেকে আসা কর্মীদের ‘এলিয়েন’ বলে কটাক্ষ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ড এবং নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ল

করোনাভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া আমেরিকানদের অধিকাংশই এখন পর্যন্ত কাজে যোগদানে সক্ষম না হওয়ায় পারিবারিক কোটায় গ্রিনকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার বিরুদ্ধে ২২ এপ্রিল ৬০ দিনের যে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল তা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল রাখার নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অভিবাসীদের একেবারে ‘এলিয়েন’ সম্বোধন করে সোমবার ট্রাম্প  জানিয়ে দিয়েছেন বাইরের দেশের কর্মী যারা এসে আমেরিকাবাসীদের চাকরির জন্য প্রতিযোগিতায়  ফেলছেন, তাদের সাময়িক প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। বাইরের দেশের কর্মীদের ‘এলিয়েন’ সম্বোধন করে  সোমবার ট্রাম্প সাফ জানান, আমেরিকাবাসীদের চাকরির জন্য যারা প্রতিযোগী হয়ে উঠেছেন, তাদের জন্য প্রবেশাধিকার আপাতত বন্ধ। ২২ জুন এক প্রক্লেমেশনে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বাজারের জন্য হুমকিস্বরূপ কোনো বিদেশিকে অভিবাসন, নন-অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না। কারণ গ্রিনকার্ড নিয়ে যারা আসবেন তারা সব সেক্টরে কাজে নিয়োজিত হবার অধিকার পাবেন। তারা যদি স্বল্প মজুরিতে কাজে ঢুকে পড়ে তাহলে বেকার হওয়া আমেরিকানরা বেকারই থেকে যাবেন।’ এ ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১০০১৪ নম্বরের সেই ঘোষণাপত্র জারির পর শ্রম মন্ত্রণালয় এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা প্রোগ্রামের গতি-প্রকৃতি গভীরভাবে খতিয়ে দেখেছেন। তারা অনুধাবন করেছেন, নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় আগতরাও বেকার হয়ে থাকা আমেরিকানদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় একটি হুমকি। করোনার কারণে বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার স্বার্থে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যুর ব্যাপারটিও একই সময় পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হচ্ছে। ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশি শ্রমিকের মতোই আমেরিকান শ্রমিকরাও অত্যন্ত যোগ্য যে কোনো সেক্টরে কাজের জন্য। উল্লেখ্য, ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে আগতদের অনেকেই স্ত্রী/স্বামী-সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তারাও আমেরিকান কর্মজীবীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে পড়েন। কারণ তারাও বিভিন্ন সেক্টরে কাজে নিযুক্ত হন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে সাময়িক সময়ের কাজের জন্যে বিদেশি শ্রমিক-কর্মচারিদের অনুমতি প্রদানকে আইনসিদ্ধ করা হলেও বর্তমানের এমন পরিস্থিতিতে তা মোটেও কল্যাণকর হতে পারে না। ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ১ কোটি ৭০ লাখের অধিক আমেরিকান চাকরি হারিয়েছে। এসব শূন্য পদ পূরণের জন্যে এইচ ২-বি নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যুর পক্ষে রয়েছে ওইসব কল-কারখানার মালিকরা। একই সময়ে  আরও ২০ মিলিয়ন অর্থাৎ ২ কোটি আমেরিকান বেকার হয়ে পড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-কারখানায়। সেসব স্থান পূরণে যদি এইচ-ওয়ান বি এবং এল ভিসায় বিদেশি লোক আনা হয় তাহলে আমেরিকানরা বেকারত্ব লাঘবের সুযোগ পাবে কোথায়?  ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে জারিকৃত আদেশে যেভাবে বলা হয়েছে, বেকার হওয়া আমেরিকানদের স্বার্থে ইমিগ্র্যান্ট এবং নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যু স্থগিত রাখতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপরোক্ত ধরনের ইমিগ্র্যান্ট ও নন-ইমিগ্র্যান্ট (বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতীত, যেমন সিটিজেনদের স্বামী/স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা) ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে ২৪ জুলাই এবং এরপর প্রতি ৬০ দিন অন্তর শ্রম মন্ত্রীর সঙ্গে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী পরামর্শ করবেন। প্রয়োজনে তারা এই আদেশ বাতিল অথবা দীর্ঘতর করার পরামর্শ দিতে পারবেন হোয়াইট হাউসকে। বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ বহাল থাকবে। এ আদেশে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী সরবরাহের কাজের জন্যে বিদেশি শ্রমিকরা আসার অনুমতি পাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অথবা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী অথবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ জাতীয় স্বার্থে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যুর অনুমতি দিতে পারবেন।

এপ্রিল মাসে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে ডেমোক্র্যাট নেতা জোয়াকুইন কাস্ট্রো জানিয়ে ছিলেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছেন ট্রাম্প। সামনেই  প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ইতিমধ্যেই প্রচার সমাবেশ শুরু করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সে জায়গায় এমন এক সিদ্ধান্ত যে শুধুই আমেরিকাবাসীদের রক্ষার্থে নয়। এর সঙ্গে আমেরিকানদের মন জয় করে নির্বাচন জয়ের রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে তা ইতিমধ্যেই আলোচ্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

সর্বশেষ খবর