সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মোকাবিলায় ঐক্যের ডাক

৬৯০ কোটি ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি

করোনা মোকাবিলায় ঐক্যের ডাক

বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কমিশনসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলার তহবিলের আশ্বাস পাওয়া গেছে। ইইউ এক্সিকিউটিভ ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপ গ্লোবাল সিটিজেনের যৌথ উদ্যোগে ৪০টি সরকারের অংশগ্রহণে বৈশ্বিক ভার্চুয়াল সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতি আসে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা-চিকিৎসা ও টিকা উদ্ভাবনে এই তহবিল ব্যয় করা হবে। সম্মেলনে জোরালোভাবে উঠে এসেছে ঐক্যবদ্ধভাবে কভিড মোকাবিলা ও সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতের বিষয়টি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জাতীয় উদ্যোগের বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের প্রচেষ্টায়  বৈশ্বিক সহযোগিতা গড়ার চেষ্টা করছে। সেই সহযোগিতা-সম্মেলনের অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে টেলিভিশন ও অনলাইনে একটি ভার্চুয়াল কনসার্ট সম্প্রচারিত হয়। মাইলি সাইরাস, জাস্টিন বিবার, শাকিরা, ক্লোয়ি এক্স হল ও আশারসহ অনেক খ্যাতনামা শিল্পী এতে অংশ নেন। যখনই ভ্যাকসিন তৈরি হবে সবাই যেন সেটা পায় তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন বিশ্ব নেতাদের অনেকে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লায়েন ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নিয়ে বলেন, যার যার প্রয়োজন তাদের সবার ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘কেবল নিজেদের জন্যই নয়, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোও যাতে ভ্যাকসিন পায় তা উচ্চ আয়ের দেশগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এটি সংহতির জন্য বড় পরীক্ষা,’ বলেন তিনি।

উরসুলার সঙ্গে একমত হয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘কার্যকর ভ্যাকসিন যখনই আবিষ্কার হোক না কেন বিশ্ব নেতা হিসাবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো- সত্যিকার অর্থে সবাই যাতে এটা পায় তা নিশ্চিত করা।’ কভিড-১৯ মোকাবিলায় তহবিলের প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে ইউরোপিয়ান কমিশন ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টম্যান্ট ব্যাংক যৌথভাবে ৪৯০ কোটি ইউরো (৫৫০ কোটি ডলার), যুক্তরাষ্ট্র ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, জার্মানি ৩৮ কোটি ৩০ লাখ ইউরো, কানাডা ৩০ কোটি কানাডীয় ডলার (২১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার) ও কাতার ১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই তহবিল থেকে কভিড-১৯ পরীক্ষা, চিকিৎসা ও ভ্যাকসিনের জন্য ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি বিশ্বের দরিদ্রতম ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এখান থেকে সহায়তা পাবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একযোগে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘স্বার্থপরতা প্রত্যাখ্যান করে আসুন সকলে একসঙ্গে এগিয়ে যাই।’ মহামারী প্রাদুর্ভাবে মারাত্মক আক্রান্ত দেশের অন্যতম ইতালিও একই অনুভূতি ব্যক্ত করে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ খবর পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ১ কোটির বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৫ লাখ।

রোগীর শরীরেই করোনা প্রতিরোধী সেল : বিশ্বে এ পর্যন্ত ১ কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯)। আর মৃত্যু প্রায় ৫ লাখ। এখন শরীরের অ্যান্টিবডিকে কাজে লাগিয়ে করোনার চিকিৎসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। একইভাবে এগিয়ে চলেছে করোনার প্রতিষেধক তৈরির কাজ। করোনা চিকিৎসায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগের অপেক্ষায় দিন গুনছে অন্তত তিনটি ভ্যাকসিন। এর মধ্যে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনার প্রতিষেধকটির উৎপাদনের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা’।

ভারতেও এই করোনা টিকার উৎপাদন শুরু করতে চলেছে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট। কিন্তু এরই মধ্যে ভাইরাসকে প্রতিহতকারী শক্তিশালী বিশেষ কোষের সন্ধানের কথা জানালেন বিজ্ঞানীরা।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর দাবি, তারা এমন এক ধরনের শক্তিশালী কোষের সন্ধান পেয়েছেন যেগুলো করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে সক্ষম। মার্কিন বিজ্ঞানীরা এই বিশেষ কোষের নাম দিয়েছেন ‘টি সেল’। বিজ্ঞানীদের দাবি, ১০ জনের মধ্যে ৮ জন করোনা আক্রান্তের শরীরেই এই ভাইরাস নিষ্ক্রিয়কারী শক্তিশালী ‘টি সেল’র উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। টি-সেল হলো এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ও তার (ইমিউনো সিস্টেম) কার্যক্রমের অন্যতম অংশ। এই টি-সেল শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণকে প্রতিহত করে আমাদের সুস্থতা বজায় রাখে।

বিজ্ঞানীরা কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার শুরুর দিন, সপ্তম দিন ও ১৪তম দিনে তাদের শারীরিক অবস্থার ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখতে পান, তাদের শরীরে টি-সেল সংক্রমণের আগের দিন থেকেই বিদ্যমান ছিল। তবে সংক্রমণের সময় বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টি-সেলের সক্রিয়তাও বাড়তে থাকে।

মার্কিন বিজ্ঞানীরা করোনা আক্রান্তের শরীর থেকে এই শ্বেতকণিকা (টি-সেল) সংগ্রহ করে সেগুলোকে পরীক্ষাগারে কৃত্রিম উপায়ে বিভাজিত ও বৃদ্ধি ঘটানোর কথা ভাবছেন। এরপর ওই কোষগুলোর জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেগুলোকে করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কথা ভাবছেন তারা। অর্থাৎ করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে বিজ্ঞানীদের এখন ভরসা এই টি-সেল। সূত্র : বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডস

সর্বশেষ খবর