শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

পুতিন যা চেয়েছিলেন তাই হলো

পুতিন যা চেয়েছিলেন তাই হলো

রাশিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এক ব্যক্তি একটানা দুবারের বেশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তাই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সংবিধানের এ নিয়মে ইতোমধ্যে দুই দফায় চারবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৩১ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ সালে পুতিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে রুশ প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব নেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন আকস্মিক পদত্যাগ করায় পুতিন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। ২০০৪ সালে পুতিন দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর এ মেয়াদ শেষ হয় ৭ মে, ২০০৮ সালে। কিন্তু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে পুতিন ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।

তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে দিমিত্রি মেদভেদেভ বিজয়ী হন। আর প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ নেন পুতিন। ২০১১ সালে মেদভেদেভের মেয়াদ শেষ হলে পুতিন ঘোষণা দেন, তিনি তৃতীয় মেয়াদের জন্য ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সে নির্বাচনে জয়লাভও করেন। তাঁর এ মেয়াদকাল ছয় বছর। চতুর্থবার নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। কিন্তু তিনি চান সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার ইতি। তাই সংবিধান পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া সেই প্রস্তাবের ওপর সাত দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ বুধবার শেষ হয়। রাশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ভোটারের ভিড় কমাতে ভোট নেওয়ার সময় সাত দিন করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ৯৯ শতাংশ ভোট গণনায় দেখা গেছে, সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৭৭.৯৩ শতাংশ মানুষ। আর বিপক্ষে পড়েছে ২১.২৬ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী ভোট প্রদানের হার ৬৪.৯৯। বিশ্লেষকরা বলছেন, যেমনটা চেয়েছিলেন পুতিন, ঠিক তেমনটাই হয়েছে। এখন তিনি নির্দ্বিধায় ২০৩৬ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ আরও ১৬ বছর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতে পারবেন। এখন পুতিনের বয়স ৬৮ বছর। ২০৩৬ সালে হবে ৮৪ বছর। তবে বিরোধীরা কিন্তু এ ভোটের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা একে আখ্যায়িত করেছেন পুতিনের আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকা হিসেবে।

নতুন সংবিধান অনুযায়ী ২০২৪ সালের পর তাঁকে ছয় বছর মেয়াদি আরও দুই দফা ক্ষমতায় থাকার অনুমোদন দেওয়া হবে। এরই মধ্যে সাবেক সোভিয়েত শাসক জোসেফ স্ট্যালিনের পর তিনিই রাশিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসক। সাত দিন ধরে চলা এ গণভোটের কোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ছিল না। পুতিনের শীর্ষ সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনি নির্বাচনের ফলকে বড় মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন, দেশে যাতে কোনো প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন নেই। রাশিয়ার নিরপেক্ষ নির্বাচন মনিটরিং গ্রুপ গোলোস এ নির্বাচনের সমালোচনা করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, অনেকাংশে গণতন্ত্র লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিরোধীদের মিডিয়ায় প্রচারণা থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোট আয়োজন করা হয়েছে বেআইনিভাবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিয়োগ করেছে সিভিক চেম্বার। এটা হলো সরকারি একটি সংগঠন। গোলোস বলেছে, এ ভোট ইতিহাসে মানুষের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রামণ হিসেবে স্থান পাবে। সংবিধান সংশোধনীতে সমলিঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে বিয়েকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হিসেবে।

সর্বশেষ খবর