মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সন্ধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত ও চীন

সন্ধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত ও চীন

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনা প্রশমনে অবশেষে লাদাখের বিতর্কিত গালওয়ান উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে চীন ও ভারত। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোবালের মধ্যে রবিবার প্রায় দুই ঘণ্টার কথোপকতন শেষে এ সিদ্ধান্ত আসে। গতকালও পৃথক বিবৃতিতে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে নিজেদের মধ্যকার সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করে দেশ দুটি। তবে আপাতত কয়েকটি পেট্রোলিং পয়েন্ট থেকে উভয় দেশই সেনাদের পিছু হটিয়ে নিচ্ছে। তবে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং হৃদের উত্তরে ও দেপসাংয়ে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

গত ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের বিতর্কিত গালওয়ান উপত্যকায় চীন ও ভারতের সেনাদের মধ্যে পাথর ও লাঠিসোটা দিয়ে সংঘর্ষ হয়। এতে ভারতের ২০ সেনাসদস্য নিহত ও কয়েকজন সেনা আহত হন। তবে চীনের তরফে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য জানানো হয়নি। যদিও ভারতের দাবি, ওই ঘটনায় বেইজিংয়ের অন্তত ৪৫ সেনা হতাহত হয়েছেন।

গতকাল ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪ থেকে দুই দেশই তাদের সেনাদের অবস্থান কিছুটা পিছিয়েছে। একই প্রক্রিয়া হট ¯িপ্রং এরিয়াতেও পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৫ ও ১৭-এ-তে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্রের বরাতে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে, ‘গালওয়ানে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রতিরক্ষার জন্য যে স্থাপনা তৈরি করেছিল চীনা সেনাবাহিনী, রবিবার রাত থেকেই তা সরানো হয়েছে। আপাতত পুরো এলাকা পরিষ্কার করা হয়েছে। চীনা সেনাদের সরিয়ে নিতে বেশ কয়েকটি গাড়ি ওই এলাকায় আনা হয়েছে। এরপরই উভয়পক্ষের সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।’ সূত্র আরও জানায়, পুরো প্রক্রিয়াটি এখনও চলমান এবং উভয় পক্ষের কতজন সেনা সরানো হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। ভারত-চীন সেনা পর্যায়ের  বৈঠকে গালওয়ানের পিপি-১৪ থেকে সেনা সরানোয় সম্মতি জানায় দুই দেশ। তবে সবদিক যাচাই করেই বলা সম্ভব এই খবর কতটা নিশ্চিত।

গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-তে জোর করে চীনা সেনাবাহিনী ভারতীয় ভূখন্ডে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ ভারতের। তারা বেশ কিছু স্থাপনাও গড়ে তোলে। যা ভারতীয় সেনারা ভাঙতে গেলে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ১৫ জুন গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-এর কাছেই চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। তারপর থেকেই পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-তে ঘাঁটি করে চীনা বাহিনী। বিতর্কিত এলাকাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে বলে খবরে বলা হয়েছে।

ভারতের নিরাপত্তাবিষয়ক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘সেনা সরানোর কাজ বাস্তবে কতটা হলো তা খতিয়ে দেখতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল নিয়ন্ত্রণরেখার বেশ কিছু পয়েন্ট যাবে। আগামীকালই (আজ) সম্পূর্ণ রিপোর্ট মিলবে। তবে গালওয়ানে চীনা সেনাদের প্রত্যাহার ও স্থাপনা ধ্বংসের কয়েকটি প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত তিন দিন ধরেই সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি নজরে পড়েছে। বিরূপ প্রকৃতির কারণে গালওয়ান নদীর পানি বাড়ছে। এজন্যও এই প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।’

উল্লেখ্য, গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পরে গত সপ্তাহে ভারত ও চীনা সেনা কমান্ডাররা তৃতীয় দফা বৈঠকে বসেন। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা প্রশমনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ে এই বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই গালওয়ান থেকে সেনা প্রত্যাহারে দুই দেশই সম্মত হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভুটানের সাকতেং অভয়ারণ্যকে নিজেদের বলে দাবি করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হয়েছে চীন। একইসঙ্গে পরোক্ষভাবে দিল্লিকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। চীন ভারতকে হুঁশিয়ার করেছে, দুই দেশের সীমান্ত বিরোধে যেন তৃতীয় পক্ষ হস্তক্ষেপ না করে। এরইমধ্যে চীনের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে ভুটান।

সর্বশেষ খবর