মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

জাপানে করোনায় যে কারণে মৃত্যুহার কম

জাপানে করোনায় যে কারণে মৃত্যুহার কম

জাপানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এ নিয়ে এখন নানা তত্ত্ব আলোচনায় উঠে আসছে। কেউ বলছে এর পেছনে রয়েছে জাপানিদের মনমানসিকতা, তাদের সংস্কৃতি। কারও মতে জাপানিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে করোনায় মৃত্যুর হার কম। তবে করোনায় মৃত্যু জাপানেই যে সর্বনিম্ন তা নয়, দক্ষিণ কোরিয়া তাইওয়ান, হংকং ও ভিয়েতনামেরও করোনায় মৃতের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু শুরুর দিকে জাপানে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ওই সময়ে সার্বিকভাবে গড় মৃতের হারের চেয়ে কম। এপ্রিলে করোনায় টোকিওতে গড় মৃত্যুর হার ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় এক হাজার বেশি।

জাপানে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫২২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৯৭৭ জনের। করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ার অনেক আশঙ্কা জাপানের ক্ষেত্রে রয়েছে। অথচ জাপান কিন্তু তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো সর্বশক্তি দিয়ে এ ভাইরাস মোকাবিলায় নামেনি। মাথাপিছু বয়স্ক মানুষের সংখ্যা পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে জাপানে বেশি। দেশটির বড় বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা অনেক, শহরগুলো মানুষের ভিড়ে ঠাসা। টোকিওতে তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ বাস করে এবং বেশিরভাগ মানুষের জন্য চলাচলের একমাত্র বাহন ভিড়ে ঠাসা শহরের ট্রেন পরিষেবা। জাপান, এমনকি সেসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ- টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট’ উপেক্ষা করেছে। এখনো জাপানে পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৪৮ হাজার মানুষকে, যা দেশটির জনসংখ্যার ০.২৭ শতাংশ।

ইউরোপের দেশগুলোতে যে মাত্রায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে, জাপানে সেভাবে কোনো লকডাউন হয়নি। শুধু এপ্রিলের প্রথম দিকে জাপান সরকার একবার জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। ঘরের ভিতর থাকার জন্য কোনো বাধ্যতামূলক নির্দেশ জারি হয়নি। শুধু অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং সেটা ছিল মানুষের স্বেচ্ছানির্ভর। জরুরি নয় এমন দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো  হয়েছিল, কিন্তু তা না মানলে কোনো আইনি ব্যবস্থা বা শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। তাহলে অন্যান্য অনেক দেশের মতো সীমান্ত বন্ধ না করে, কঠোর লকডাউন না দিয়ে, ব্যাপক হারে পরীক্ষা না চালিয়ে আর কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ না দিয়েও জাপান কীভাবে মৃত্যুর সংখ্যা এত কম রাখতে পারল? জাপানে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ার ৫ মাস পরও দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ৩০ জুনের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০ হাজারের নিচে, আর মৃতের সংখ্যা ১ হাজারের কম। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত মাসের শেষের দিকে যখন জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন, তখন তিনি বেশ গর্বের  সঙ্গে এটাকে ‘জাপান মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, অন্য দেশের জাপান থেকে শেখা উচিত। মানুষ সতর্ক হয়েছে, সংক্রমণ এড়িয়েছে এবং সংক্রমণ কম হওয়ার কারণে মৃত্যুও কম হয়েছে। যদিও মার্চের মাঝামাঝি টোকিওতে হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়ার ঘটনা ঘটেছিল। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ৭ এপ্রিল জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। তবে ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক করেননি তিনি। শুধু বলেছিলেন, সম্ভব হলে ঘর থেকে বের হবেন না। জাপান পৃথিবীর আর পাঁচটা দেশের মতোই। রোগ বিস্তারের যে চেইন সেটাকে ভাঙতে পারার মধ্যেই রয়েছে এই রোগ ঠেকানোয় সাফল্যের চাবিকাঠি। জাপানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো, সেখানকার মানুষের মধ্যে নির্দেশ মানার সংস্কৃতি। সরকার জানে তারা জনগণকে কিছু বললে জনগণ তা শুনবে এবং মানবে। জাপানের সরকার মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়নি, থাকা ভালো বলে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু জনগণ ঘরে থেকেছে। বিবিসি

সর্বশেষ খবর