বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

‘ক্ষতি মেনেছি’ ভঙ্গি দিয়ে কানাকড়িও ছাড় না দেওয়ার চীনা কৌশল!

প্রতিদিন ডেস্ক

‘ক্ষতি মেনেছি’ ভঙ্গি দিয়ে কানাকড়িও ছাড় না দেওয়ার চীনা কৌশল!

ধাক্কা মারলেই কাক্সিক্ষত ফল হাতে তুলে দেবে, যেমন দিয়েছিল মধ্য এশিয়ার তিনটি দেশ- কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান- সে রকম কিন্তু ভারত নয়। জবরদস্তির সঙ্গে প্রণোদনার মিশেল দিয়ে চীন ওই দেশগুলোর কাছ থেকে নিজের অনুকূলে সীমান্ত মীমাংসা হাসিল করেছিল। দাবি করব বিস্তর কিন্তু একেবারে কম নিয়ে আপস করছি, এ রকম ভাব দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে মোহগ্রস্ত করার চাতুরী এটা। চীন আসলে কানাকড়িও ছাড় দেয়নি অথচ ভঙ্গি করছে- শান্তির স্বার্থে ‘ক্ষতি মেনে নিলাম’। ভারতীয় সাময়িকী ‘ইন্ডিয়া টুডে’র ৩ জুলাই, ২০২০ সংখ্যায় ‘চায়নায় লাদাখ গেমপ্লেন’ শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সামরিক কব্জির জোরে আকসাই চীন এলাকাটি গ্রাস করে নিতে চাইছে চীন। এ অবস্থায় সীমান্ত সমস্যার বিষয়টির সুরাহায় ভারতকে সাবধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইন্ডিয়া টুডে বলছে, চীনের ‘ঔদার্যের’ অভিনয়ে মোহগ্রস্ত হয়ে ১৯৯০ দশকে ভূখ-গত অনেক ছাড় দিয়ে ফেলেছে মধ্য এশিয়া। সর্বশেষ ২০১১ সালে তাজিকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রক্ষা করে চীন। ২৮ হাজার বর্গকিলোমিটার- বলেছিল তারা তোমাদের কাছে পাই। কিন্তু সারেকল পর্বত এলাকায় ১ হাজার ১৫৮ বর্গকিলোমিটার দিতে রাজি হয় তাজিকরা। চীন বলে, ঠিক আছে। ক্ষতি মেনে নিলাম। তাজিকরা ভাবগদগদ হয়- ‘জিতেছি!’ অথচ চীন এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়নি। তাজিকরা তো চীনাদের কোনো জমিই দখল করে রাখেনি। যা সে পেল, সবটাই তার লাভ। চীনের মোহনীয় কৌশলের শিকার হয়েছিল রাশিয়ার মতো দেশও। চীনের নৃতাত্ত্বিক চাতুরী এখন চলছে কাজাখস্তান ও রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে।

১৯৬৩ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে চীন যে তামাশা করে, তা ওই সময় আমোদজনক ছিল। বালতিস্তান/লাদাখ অঞ্চলে পাকিস্তান তার দখলকৃত জমির ৫ হাজার ১৮০ কিলোমিটার (২ হাজার ৫০ বর্গমাইল) চীনকে ছেড়ে দেয়। বিনিময়ে পাকিস্তানকে চীন দিয়েছিল খনিজ সম্পদপূর্ণ অপারং উপত্যকা এবং দরবান্দ-দরোয়াজা এলাকার ৭৫০ বর্গমাইল জমি। তবু পাকিস্তানের নেতারা বলেন, তারা চীনকে কোনো ছাড় দেননি। শুধু তা-ই নয়, ওই নেতারা ৭৫০ বর্গমাইল জমি পাকিস্তানকে দিয়ে দেওয়ার ঔদার্যের জন্য চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন লাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নিবন্ধে বলা হয়, পাকিস্তানের ওই ভূমি প্রত্যর্পণের পরিণামে প্রথমবারের মতো কুনলুন পর্বতমালা থেকে শুরু করে কারাকোরাম পর্যন্ত চীনের সীমান্ত বিস্তার ঘটে এবং এরই কারণে এশিয়ায় চীনা সীমান্ত কৌশল নিন্দা অর্জন করতে থাকে। এমনকি জম্মু ও কাশ্মীরের জমি তড়িঘড়ি চীনকে দিয়ে দেওয়ার কারণে পাকিস্তানও এখন আফসোস করে।

ইন্ডিয়া টুডে বলছে, বেইজিংয়ের সমস্যা হচ্ছে, তার সীমান্ত চাতুরীর ব্যাপারটি ভারতের ওপর খাটাতে পারছে না। ২০০৫ সালের খসড়া চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে তাৎপর্যময় ছাড় হাতিয়ে নিতে না পেরে চীন আশ্রয় নিয়েছে সহিংস সামরিক কৌশলের।

২০১৩ সালে গণমুক্তি বাহিনী দেপসাং-এর ১৯ কিলোমিটার ভিতরে অনুপ্রবেশ করে। সীমান্ত প্রশ্নে সুবিধা দ্রুত আদায় করে নেওয়ার মতলবেই এটা করা।

সম্প্রতি লাদাখে চীন যা করল তারও লক্ষ্য হচ্ছে আকসাই চীন এলাকার স্থিতাবস্থা বিনষ্ট করে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর সীমান্ত স্বীকার করে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করিয়ে নেওয়া। এটা হয়ে গেলে চীনকে কিছুই হারাতে হবে না। চীন ধরে নিয়েছে, ভারত মেনে নেবে যে, আকসাই চীন যেমন আছে তেমনই থাকবে চিরকাল। চীনের বিরাট গলদ এটাই।

চীনের কামনা পূরণ করতে গিয়ে আকসাই চীন অঞ্চলে ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখন্ডের ওপর দাবি ভারত ছেড়ে দেবে? মহাবলিপুরমে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তা পরিত্যাগ করবার বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ কখনো সমর্থন করবে না।

সর্বশেষ খবর