শিরোনাম
শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
পানি বণ্টন সংলাপ এড়ানো হচ্ছে নানা ছুতোয়

কাবুলে ‘আপনজনদের’ ক্ষমতায় আসার প্রতীক্ষায় পাকিস্তান

প্রতিদিন ডেস্ক

কাবুলে ‘আপনজনদের’ ক্ষমতায় আসার প্রতীক্ষায় পাকিস্তান

কাবুলে তালেবানের আত্মঘাতী বোমা হামলার পর ধোঁয়াচ্ছন্ন আকাশ - ফাইল ছবি

আফগানিস্তানে নতুন সরকার এলে নিজের সুবিধা অর্জনের পাল্লাটা ভারী হবে। নতুন মানে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার। এজন্য আফগানিস্তানের সঙ্গে নদীর পানি বণ্টন চুক্তির জন্য সংলাপ অনুষ্ঠানের কাজটি নানা কৌশলে বিলম্বিত করে চলেছে পাকিস্তান।

পাশ্চাত্যের পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কূটনৈতিক মহলে বলাবলি হচ্ছে যে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির নেতৃত্বে যে সরকার ক্ষমতাসীন তাদের দিয়ে ‘কাক্সিক্ষত কাজ’ করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করে পাকিস্তান। তাই চিত্রল নদীর পানি (এ নদীর প্রবাহই এসে পড়ছে কাবুল নদীতে) দুই দেশের মধ্যে বণ্টনের প্রশ্নে প্রয়োজনীয় সংলাপ নানা ছুতোয় এড়িয়ে চলছে পাকিস্তান। কারণ সংলাপজনিত চুক্তিতে যে পানি পেত, সংলাপ না হওয়ায় এখন তার দ্বিগুণ পরিমাণ পানি পাচ্ছে পাকিস্তান।

‘সানডে স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকা জানায়, প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পড়শি দেশগুলোর সঙ্গে আন্তরিক ও সক্রিয় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষপাতী। তার মানে তিনি কেবল পাকিস্তানই প্রিয় পড়শি, এমন দৃষ্টিভঙ্গির ধারক নন। তাই তালেবানরা মনে করে ঘানি ভারতপন্থি রাজনীতিক। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সহযোগিতাপুষ্ট তালেবানরা ঘানি সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। নৌবাহিনীর সদর দফতরকে এ চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, পানি বণ্টন প্রশ্নে এখন চুক্তি করা হলে তা হবে পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর। কারণ আশরাফ ঘানির আমলে মঙ্গলকর কিছু আদায় করা সম্ভব হবে না। সুতরাং চিঠিতে বলা হয়, কাবুলে আমাদের প্রিয় মানুষদের সরকার ক্ষমতায় বসা পর্যন্ত প্রতীক্ষায় থাকা প্রয়োজন।

তালেবান-উত্তর সরকারের আমলে আফগানিস্তানে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পে ভারত সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দফতরকে দেওয়া চিঠিতে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রকল্পগুলোর আলোকে পাকিস্তান তার জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্য ২০১৭ সালের মার্চে আন্তমন্ত্রণালয় গ্রুপ গঠন করেছিল। অবিলম্বে এ গ্রুপকে কার্যকর করা দরকার।’

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অস্বস্তিকর হয়ে ওঠার সুযোগ নিতে চায় আইএসআই। তাই দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র তালেবান শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকেই ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর অন্যতম আফগানিস্তানে তালেবানরা বেনামে নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। এর লক্ষ্য ঘানি সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।

চীনা কৌশল অবলম্বন : ডুরান্ড লাইন বরাবর আফগান ভূমি জবরদখল করে রেখেছে পাকিস্তান। ফলত, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সানডে স্ট্যান্ডার্ড বলছে, পরের ভূখ- দখলে রাখার কৌশলটা পাকিস্তান আয়ত্ত করেছে চীনের কাছ থেকে।

আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি পাকিস্তানকে দেওয়া প্রতিবাদপত্রে বলেছে, ‘তোমাদের সেনারা আমাদের একটি কবরস্থানসহ ৬০০ বর্গমিটার জবরদখল করে রেখেছে। এখন সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। এ জায়গা থেকে সেনা সরাও।’ আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে তানি জেলার সনজি ও ওয়ারজাহ্লা এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা ৫০০-৬০০ বর্গমিটার জবরদখল করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে।

সানডে স্ট্যান্ডার্ড জানায়, অন্যদিকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর মদদে তালেবানরা মে মাস থেকে অন্তর্ঘাত চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। শান্তি আলোচনা নস্যাৎ করার জন্যই এসব ঘটানো হচ্ছে বলে মনে হয়। এসব অপরাধের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা অত্যাবশ্যক।

সর্বশেষ খবর