রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি চীনের

উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনের শক্তিশালী পলিটব্যুরোর এক সদস্যসহ চার কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিষেধাজ্ঞার পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। বৃহস্পতিবার দেশটির উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় পড়া চার কর্মকর্তা হলেন- চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি চেন কুয়াংগু, অঞ্চলটির সাবেক পার্টি সেক্রেটারি ঝু হাইলুন, জিনজিয়াং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর পরিচালক ও পার্টি সেক্রেটারি ওয়াং মিংশান এবং সাবেক পার্টি সেক্রেটারি হুয়ো লিউজুন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞাকে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘অত্যন্ত ক্ষতিকারক’ বলে বর্ণনা করেছে বেইজিং। এর আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের একে অপরকে দোষাদোষী এবং হংকং নিয়ে এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে তিক্ত হয়ে ওঠা সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এ নিষেধাজ্ঞা। রাজধানী বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মারাত্মক হস্তক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রের এ ভুল সিদ্ধান্তের জবাবে মার্কিন কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও একই রকম পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন লিজিয়ান। যুক্তরাষ্ট্রকে এ ভুল শুধরানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় চীন ‘কড়া পাল্টা পদক্ষেপ’ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে ১০ লাখেরও বেশি মুসলিমকে ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তবে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেইজিং। মার্কিন প্রশাসনের নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ চার চীনা কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো লেনদেন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রে এ কর্মকর্তাদের কোনো সম্পদ থাকলে এখন তাও জব্দ করা যাবে।

‘চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই’ : চীনের ওপর নানা কারণে ক্ষিপ্ত হওয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, বিশ্বজুড়ে চীনের আগ্রাসী তৎপরতার প্রতিফলন ঘটছে ভারত-চীন সীমান্তে। তার ঘনিষ্ঠজনদেরও একই মত। চীনের আগ্রাসী কর্মকা  ঠেকানোর জন্য দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে মনে করছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন, তা এখনই পরিষ্কার না হলেও বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শিগগিরই এ বিষয়টি সবাই জানতে পারবে।

বিতর্কিত সীমান্তে ভারত ও চীনের চরম দ্বন্দ্বের মধ্যে গত ১৫ জুন লাদাখে সেনা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সদস্য হতাহত হয়। ভারত তাদের ২০ সেনা সদস্যের মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও চীন কোনো সংখ্যার কথা জানায়নি। উত্তেজনা বাড়ার একপর্যায়ে চীনের ৫৯টি বহুল ব্যবহৃত মোবাইল ফোন অ্যাপসের ব্যবহার ভারতে নিষিদ্ধ করে দিল্লি সরকার। এরপর অবশ্য লাদাখ সীমান্ত থেকে ভারত-চীন উভয় পক্ষ পিছু হটতে শুরু করে। কিন্তু এখনো ওই ইস্যুর দিকে সতর্ক নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র, এমনটা জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র। ওই মুখপাত্র জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, বিশ্বজুড়ে চীনের আগ্রাসনের প্রতিফলন ঘটেছে ভারত সীমান্তে।

এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত পোষণ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভারত-চীন দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় এবং সে কথা বহুবার বলেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও নিজেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বহুবার বলেছেন। গত সোমবার তিনি চীনের ব্যাপারে বলেন, ‘ঘরে-বাইরে সব জায়গায় বেইজিংয়ের ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে ওঠার ধরনটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।’ পররাষ্ট্র দফতরের ওই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এমন এক চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মোকাবিলা করছি, যেটা নিজ জনগণকে দমন করতে চায় এবং প্রতিবেশীদের পীড়ন করতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেইজিংয়ের আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং ব্যবস্থা নেওয়াই এসব উসকানি ঠেকানোর একমাত্র পথ।’ ব্যবস্থা নেওয়া বলতে তিনি ভারতে চীনের ৫৯টি মোবাইল অ্যাপস নিষিদ্ধ করার কথা বুঝিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে ওই সব অ্যাপস নিষিদ্ধ করার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব অ্যাপস কোনো কোনো ক্ষেত্রে চীনের নজরদারির কাজে ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। অ্যাপসগুলো নিষিদ্ধ করার মধ্যদিয়ে ভারতের সার্বভৌমত্ব জোরদার হলো বলে তিনি মনে করেন।

পররাষ্ট্র দফতরের ওই মুখপাত্র চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট না হলেও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন সরকার। হংকংয়ে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নেয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমালোচনা ও হংকংবাসীর বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সত্ত্বেও গত ১ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে চীন সরকার। পশ্চিমা সরকারগুলোর মতে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে ওই আইন বলবৎ করে চীন সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে।

চীনের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের যেসব কর্মকর্তা সেখানকার সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত এক বিলে স্বাক্ষর করে সেটাকে আইনে রূপ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হিন্দুস্তান টাইমস।

সর্বশেষ খবর