শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

লাদাখে এখনো মুখোমুখি চীন- ভারত

লাদাখে এখনো মুখোমুখি চীন- ভারত

লাদাখ সীমান্ত থেকে যত সেনা সরানোর কথা ছিল, তা সরায়নি চীন। ভারতও লাদাখ অঞ্চল থেকে সেনা সরায়নি। প্যাংগংসহ বেশ কিছু অঞ্চল নিয়ে বিতর্ক এখনো অব্যাহত। তবে ভারতের অভিযোগ, এই অবস্থার জন্য দায়ী চীন। ভারতীয় কূটনীতিক মহল বলছে, গালওয়ান অঞ্চল থেকে সৈন্য সরিয়ে নিলেও লাদাখের অন্যান্য বিতর্কিত অঞ্চলে এখনো প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য মোতায়েন রেখেছে চীন। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গেছে, তারাও আপাতত লাদাখ থেকে সৈন্য সরাচ্ছে না। ফলে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা সম্পূর্ণ প্রশমিত হয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না। মে মাসের শেষ পূর্ব লাদাখে প্যাংগং লেক অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রথম উত্তেজনা শুরু হয়। এই হ্রদের এক তৃতীয়াংশ ভারতের দখলে, দুই তৃতীয়াংশ চীনের। ভারতের দাবি হ্রদের ফিঙ্গার পয়েন্ট এক  থেকে আট পর্যন্ত তাদের অঞ্চল। চীনের দাবি ফিঙ্গার পয়েন্ট চার পর্যন্ত তাদের দখলে। এর আগেও এই অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ হয়েছে। মে মাসের শেষ দিকে এই অঞ্চলে দুই দেশের সৈন্য হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। তবে উত্তেজনা চরমে  পৌঁছয় ১৫ জুন রাতে। ওই দিন গালওয়ান অঞ্চলে প্যাট্রোল পয়েন্ট ১৪ তে দুই দেশের সেনার মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। মৃত্যু হয় ২০ জন ভারতীয় সেনার। কিন্তু চীনের কত জন মারা গেছে সে সম্পর্কে কিছুই জানায়নি চীন। ওই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশ প্রকৃত সীমান্ত রেখা বরাবর সেনা বাড়াতে শুরু করে। উত্তেজনা চরম পর্যায়ে যাওয়ার পর দুই দেশেই কূটনৈতিক স্তরে আলোচনাও শুরু করে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দুই দেশ একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। ঠিক হয়, সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখতে দুই দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। গালওয়ান অঞ্চলে সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে প্যাংগং, ডেপসং এবং গোগরা হট স্প্রিং নিয়ে। কারণ এই তিনটি অঞ্চলের ভূখ- নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ ঐতিহাসিক। ফলে ওই অঞ্চলে কোন দেশ কতটা সেনা পিছিয়ে নেবে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল। আরও একটি প্রশ্ন একই সঙ্গে উত্থাপন করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিলেও, এখনই কি দুই দেশ বিতর্কিত অঞ্চল থেকে  সেনা সরাবে? সাম্প্রতিক রিপোর্টে সেই প্রশ্নেরই উত্তর মিলেছে। প্রকৃৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে কয়েক কিলোমিটার পিছিয়ে গেলেও চীন সৈন্য সংখ্যা কমায়নি। বিতর্কিত এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার পিপলস লিবারেশন আর্মির জওয়ান মোতায়েন আছে। তারই সঙ্গে লং ডিস্ট্যান্স ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান ধ্বংসকারী মিসাইলও মজুদ করা আছে। ভারতও লাদাখ থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়নি। চীনের প্রায় সমপরিমাণ সেনা ভারতও মজুদ রেখেছে।  লে. সামরিক বিমান ঘাঁটিতে যুদ্ধ বিমান রাখা আছে। আট মিনিটের মধ্যে যা প্রকৃত সীমান্ত রেখায় পৌঁছে যেতে পারে।

জানা গেছে,  প্যাংগং, ডেপসং এবং গোগরা হট স্প্রিং নিয়ে দুই দেশই কোনো সমাধান সূত্রে পৌঁছতে পারেনি। ফলে সীমান্ত উত্তেজনা কমানো যাচ্ছে না। প্যাংগংয়ে ফিঙ্গার পয়েন্ট পাঁচে চীনা সেনা এখনো রয়েছে।

তা হলে কি ফের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ না হলেও উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা এখনই নেই। দুই দেশ যতদিন এলাকায় সেনা মোতায়েন রাখবে, ততদিন এমন আবহাওয়া বজায় থাকবে। আপাতত কোনো দেশই সেনা সরাবে বলে মনে করা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি সামান্য উত্তেজনা হলেই তা বড় সংঘাতের চেহারা নেবে বলে মনে করছেন তারা।

সর্বশেষ খবর