রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা চলছেই

হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট মার্কিন এজেন্টদের দখলে, গুপ্তচরগিরির অভিযোগে আটক সিঙ্গাপুরের নাগরিক

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা চলছেই

কূটনৈতিক স্থাপনা ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টার অভিযোগে হিউস্টন ও চেংদুতে একে অপরের কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ ঘিরে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। হিউস্টনে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশ সত্ত্বেও দেশটি তা না মানায় সেটি দখলে নিয়েছে মার্কিন ফেডারেল এজেন্ট ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরের পর পরই তারা সেখানে প্রবেশ করে বলে সিএনএন জানিয়েছে। এদিকে, ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে জুয়ান ট্যাং নামে চীনের এক গবেষককে আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আত্মসমপর্ণের জন্য মার্কিন বিচার বিভাগের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই গবেষক সান ফ্রান্সিসকোর চীনা কনস্যুলেটে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কথা স্বীকার করেছেন জুন ওয়ে ইয়েও নামে সিঙ্গাপুরের এক নাগরিক। ইতিমধ্যে তাকে আটক করেছে দেশটি। মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনগুলো ব্যবহার করে চীন দেশটির বিরুদ্ধে গুপ্তচরগিরির চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। হিউস্টনে অবস্থিত কনস্যুলেটও এ কাজে ব্যবহার করেছে বেইজিং। আর এ অভিযোগেই কনস্যুলেটটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের জন্য বেইজিংয়ের প্রতি গত মঙ্গলবার নির্দেশনা দিয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু এ সময়সীমা পার হলেও বেইজিংয়ের তরফে তা বন্ধের কোনো ব্যবস্থা না আসায় শুক্রবার কনস্যুলেট কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে মার্কিন ফেডারেল এজেন্ট ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিএনএনের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরের পর টেক্সাসের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট কম্পাউন্ডে পরপর কয়েকটি কালো রঙের এসইউভি, ট্রাক, দুটি সাদা ভ্যান ও একটি লকস্মিথ ভ্যান প্রবেশ করে। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, চীনা এজেন্টরা টেক্সাস অঙ্গরাজ্য থেকে মেডিকেল ও অন্যান্য গবেষণা কর্ম চুরির চেষ্টা চালিয়েছেন। এক্ষেত্রে তারা হিউস্টন কনস্যুলেট ব্যবহার করেছেন। তবে চীন মার্কিন দাবিকে বিদ্বেষপূর্ণ অপবাদ আখ্যা দিয়ে তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।

এদিকে, সান ফ্রান্সিসকোর চীনা কনস্যুলেটে আশ্রয় নেওয়া সে দেশের (চীন) একজন গবেষককে গ্রেফতার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ এড়াতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন জুয়ান ট্যাং। ২৭ জুলাই তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গবেষক জুয়ান ট্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ভিসার আবেদনের সময় চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সংযোগের তথ্য গোপন করেছিলেন তিনি। জুয়ানকে গ্রেফতারের আগে চীনে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকদের প্রতি সতর্কতা জারি করে বিচার বিভাগ। এতে বলা হয়, চীনে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরা বিনা বিচারে আটকের অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন। অন্যদিকে, চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কথা স্বীকার করেছেন সিঙ্গাপুরের এক নাগরিক। জুন ওয়ে ইয়েও নামে ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নিজের রাজনৈতিক পরামর্শ কেন্দ্র থেকে চীনের গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য দিয়ে আসছিলেন। চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক লুকানোর অভিযোগে জুন ওয়ে ইয়েওকে আটক করা হয়। এএফপির খবরে বলা হয়, ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালতে জুন ওয়ে ইয়েও বিদেশি চর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি ‘ডিকসন ইয়েও’ নামেও পরিচিত। জুন আদালতকে বলেছেন, তিনি ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চীনের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হয়ে কাজ করেন। মার্কিন সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তার তথ্যসহ বিভিন্ন মূল্যবান তথ্য তিনি চীনের গোয়েন্দাদের কাছে সরবরাহ করতেন। এ কাজে তিনি অর্থও ঢেলেছেন। ওয়ে আদালতকে আরও বলেছেন, তিনি চীনের গোয়েন্দাদের সঙ্গে বহুবার দেখা করেছেন। চীন ভ্রমণের সময় তাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হতো। সিঙ্গাপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি চীনের গোয়েন্দাদের হয়ে কাজ করতেন। 

উল্লেখ্য, হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করার মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশের জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে শুক্রবার সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংদুতে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেয় চীন। সিএনএন, এএফপি ও আল-জাজিরা

সর্বশেষ খবর