বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা নিয়ে আশার বাণী দিলেন বিল গেটস

করোনা নিয়ে আশার বাণী দিলেন বিল গেটস

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, সেন্টিবিলিয়নিয়র (১০০ বিলিয়ন) ও সমাজসেবী বিল গেটস। এতদিন পরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আশার বাণী শোনালেন, দেখালেন আশার আলো। সম্প্রতি তিনি বলেছেন সম্ভবত আগামী বছর বেশ কয়েকটি দেশে শেষ হয়ে যেতে পারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে আর তেমন দাপট দেখাতে পারবে না করোনা। মার্কিন প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও রাজনীতিবিষয়ক সাময়িকী অয়্যারড-এর সঙ্গে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন করোনাভাইরাস মহামারী, এই মহামারী মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা, টিকা উদ্ভাবন ও জনমানুষের কাছে সে টিকা পৌঁছানো নিয়ে। অয়্যারড-এর ওয়েবসাইটে গত শুক্রবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল রাশিয়া ঘোষণা করেছে তারা করোনোভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে এবং তা শতভাগ সফল। আর এই ভাইরাসের টিকাও প্রথম নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মেয়ে। ফলে গেটসের আশাবাদও পূরণ হচ্ছে তা বলা যায়। করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি অর্থ লগ্নিও করেছেন। গেটস ও তার স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। মূলত করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় তাঁর ফাউন্ডেশন বিশ্বের সব মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দেওয়ার ব্রত নিয়ে টিকা উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করছে। সেই বিনিয়োগ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ভারতেও পাঠিয়েছেন।

বিল গেটসে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলেছিলেন, মহামারীর কারণে অর্থনীতি ধ্বংস হতে চলেছে। কিন্তু সেই থেকে বেরিয়ে আসা কিছুতেই সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেছিলেন মহামারীর কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য অনেকগুলো দিক খুলে যাবে। তারপরই তিনি বলেন, আর্থিকভাবে সচ্ছল দেশগুলোতে ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই মহামারী শেষ হয়ে যাবে। বাকি বিশ্ব ২০২২ সালের মধ্যেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাবে। গেটস গত সপ্তাহেই ভারতের পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটকে ১০০ মিলিয়ন আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। সাক্ষাৎকারে গেটসকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি অনেক বছর ধরেই একটি বৈশ্বিক মহামারী নিয়ে সতর্ক করে আসছিলেন। আজ তেমনই একটি মহামারী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারী মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে, তা নিয়ে কি আপনি হতাশ?

উত্তরে তিনি বলেন, শুধু এবার নয় এর আগেও তিনি হতাশ হয়েছিলেন। আর সেটা তিনবার। তিনি বলেন, প্রথমবার হতাশ হয়েছি এই মহামারীর আগে, ২০১৫ সালে। সে সময় থেকে আমরা যদি রোগ শনাক্ত, চিকিৎসা ও টিকা উদ্ভাবনের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতাম এবং কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা যদি অনুসন্ধান করতাম, তাহলে আমরা নাটকীয়ভাবে মহামারী মোকাবিলা করতে পারতাম। তারপর হতাশ হয়েছি চলমান মহামারীর প্রথম কয়েক মাসে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতিই দেয়নি, প্রথম দিকে মার্কিন রোগনিয়ন্ত্রণ সংস্থার (সিডিসি) মাধ্যমে খুব স্বল্পসংখ্যক পরীক্ষা করেছে এবং তারা মূলত মানুষকে পরীক্ষাই করতে দেয়নি। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বড্ড দেরি করে। মহামারীর প্রথম কয়েক মাস পার না হতেই আমরা মাস্কের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছি, কিন্তু এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা দেখে আমি বিস্মিত। রোগতত্ত্বের বিশ্বের সবচেয়ে জ্ঞানী-গুণী মানুষগুলো কাজ করেন সিডিসিতে। আমি তাঁদের কাছে আরও ভালো কিছু আশা করেছিলাম। হোয়াইট হাউস নয়, আপনি এই মহামারীতে সিডিসিকে সম্মুখভাগে প্রত্যাশা করবেন। কিন্তু তারা তা ছিল না। বরং এখন তারা কোনো নির্দেশনা দিতে পারছেন না। আর এই ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর, নাকি শীর্ষ নেতৃত্বের? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা যে কোনো সময়ই (পরিস্থিতির) ময়নাতদন্ত করতে পারি। মহামারী এখনো চলছে, কাজেই আমাদের মনোযোগটা সেদিকেই থাকা উচিত। মার্চের পর থেকে সিডিসিকে প্রয়োজনীয় কাজ করতে দেয়নি হোয়াইট হাউস। এটা প্রতিষ্ঠানের ভুল নয়। বরং ভুল নেতৃত্বের। সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, মহামারীতে হঠাৎ জীবনের ছন্দপতন। এতে তার জীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি প্রচুর ভ্রমণ করি। ধরা যাক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে আমার বলা দরকার, ‘করোনাভাইরাসের টিকার জন্য কিছু অর্থ দিন।’ তাহলে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরতে আমি সশরীরে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতাম। কিন্তু জিএভিআই (টিকা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের বৈশ্বিক জোট) সম্মেলনে আমি বাড়িতে বসেই যোগ দিয়েছি, সেদিন শুধু একটু আগেভাগে ঘুম থেকে উঠেছি। আমার সন্তানেরা এখন বাড়িতে এত সময় কাটায়, যা আমি কখনো ভাবিইনি। বিষয়টি আমার জন্য অত্যন্ত সুখের। আমি এখন আরও বেশি খাবার রান্না করি, দিনে দিনে রান্নায় আরও দক্ষ হয়ে উঠছি। তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কী ধরনের মাস্ক ব্যবহার করেন? তিনি বলেন, আমি খুব সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করি। প্রতিদিনই মাস্ক পরিবর্তন করি। আমার হয়তো একটি ডিজাইনার মাস্ক বা এমন সৃজনশীল কিছু থাকা দরকার ছিল। কিন্তু সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করেই আমি সন্তুষ্ট। এদিকে বিল গেটসের সংস্থার সহায়তার পরই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে তাদের তৈরি প্রতিষেধকের বাজার মূল্য হবে ৩ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মূল্য হবে ২৫৫ টাকা।

সর্বশেষ খবর