রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তির প্রতিক্রিয়া

সম্পর্ক ছিন্নের হুমকি তুরস্কের

সম্পর্ক ছিন্নের হুমকি তুরস্কের

চুক্তির সংবাদে এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখায় ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির ফলে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে অঞ্চলটিতে সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সুযোগে অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোতে অস্ত্রবিক্রিও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হুঁশিয়ার করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েপ এরদোগান। তেল আবিবের সঙ্গে চুক্তির প্রতিবাদে দুবাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১৩ আগস্ট ইসরায়েল ও আমিরাত নিজেদের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং নতুন একটি বৃহত্তর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। মিসর ও জর্ডানের পর তৃতীয় আরব দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করল আমিরাত। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের বড় ক্রেতা দেশটি। তাই  স্বভাবতই ওয়াশিংটন এ চুক্তিতে খুশি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটিতে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রেইডম্যান বলেছেন, আমিরাত যত ইসরায়েলের মিত্র, অংশীদার ও যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র হবে, আমি মনে করি এতে হুমকির মাত্রা কমবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রবিক্রিতে আমিরাত লাভবান হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, আরব দেশগুলোর তুলনায় তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র পাবে। যেমন লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান যুদ্ধে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল কিন্তু আমিরাত এখনো তা কিনতে পারেনি। নিয়ার ইস্ট পলিসি থিংকট্যাংকের ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক প্রকল্পের পরিচালক ডেভিড মাকোভস্কি বলেন, এ চুক্তিটি আমিরাতের জন্য জয়। এর ফলে আমিরাত সামরিক সরঞ্জাম কিনতে পারবে যেগুলো এখন শুধু ইসরায়েলই কিনতে পারে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র এগুলো বিক্রি করে না আরব দেশগুলোর কাছে। উল্লেখ্য, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমিরাতের কাছে ৪ হাজার ৫৬৯টি মাইন রেসিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রটেকটেড যান বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়, যার মূল্য ৫৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আমিরাতকে এরদোগানের হুঁশিয়ারি : ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হুঁশিয়ার করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েপ এরদোগান। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে স্বাক্ষরিত এ চুক্তির প্রতিবাদে আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ ইঙ্গিত দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এরদোগান সাংবাদিকদের বলেন, আমিরাতের এ পদক্ষেপকে কোনোভাবেই মেনে নেবে না তার দেশ। তিনি জানান, আবুধাবির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করা অথবা সেখান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি।

চুক্তি ফিলিস্তিনিদের জন্য মহাবিশ্বাসঘাতকতা : সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েল পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন মধ্যস্থতায় যে চুক্তি করেছে তার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে ইয়েমেনের জনপ্রিয় হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলন। সংগঠনটি বলেছে, আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যকার এ চুক্তি ফিলিস্তিনিদের জন্য মহাবিশ্বাসঘাতকতা। এক বিবৃতিতে আনসারুল্লাহ আন্দোলনের পলিট ব্যুরো বলেছে, আমিরাত-ইসরায়েল চুক্তির মধ্য দিয়ে কথিত আরব জাতীয়তাবাদের সেøাগানের অন্তঃসারশূন্যতা পরিষ্কার হয়েছে।

 অথচ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট আরব জাতীয়তাবাদের ধোয়া তুলে ইয়েমেনের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। সৌদি জোটে সংযুক্ত আরব আমিরাত হলো সক্রিয় সদস্য।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ভুল পথে চলা অব্যাহত রেখেছে যা মূলত মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ইসরায়েলের স্বার্থই রক্ষা করছে। অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত দাবি করছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি-স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে। আনসারুল্লাহ আন্দোলন আমিরাতের এ দাবি ভুয়া বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখলেও গত কয়েক বছরে ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজেকে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে চিত্রিত করতে চাইছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করলে এরদোগান বলেন, তুরস্ক ওই প্রস্তাব কখনোই মেনে নেবে না। আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন ইস্যুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর