শিরোনাম
রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

দোস্তির উষ্ণতা পুনরুদ্ধারে সৌদি তোষণ শুরু করেছে পাকিস্তান

প্রতিদিন ডেস্ক

দোস্তির উষ্ণতা পুনরুদ্ধারে সৌদি তোষণ শুরু করেছে পাকিস্তান

কাশ্মীর প্রশ্নে ‘পাকিস্তানি উগ্রতায় রুষ্ট সৌদি আরব সম্পর্ক শীতল করে ফেলে। শুধু তাই নয়। ‘পাওনা পয়সা এখনই দাও’ ভঙ্গি করলে পাওনা পরিশোধে বাধ্য হয় পাকিস্তান। পর্যবেক্ষকরা বলেন, সামনে আরও ঝামেলার আশঙ্কায় দোস্তির উষ্ণতা পুনরুদ্ধারে সোদি আরবকে তোষণ শুরু করেছে পাকিস্তান। আল জাজিরার পর্যালোচনায় বলা হয়, বেশ কিছু ইস্যুতে মতবিরোধ তৈরি হলেও পুরনো মিত্রকে কে হারাতে চায়? সুতরাং শীতল সম্পর্ক ফের উষ্ণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সৌদি-পাকিস্তান। গত ১৭ আগস্ট সৌদি আরব সফরে যান পাকিস্তানের চিফ অব আর্মি স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। যদিও সেখানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে শুধু রুটিনমাফিক আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর কিছু দিন পরেই ওআইসির ভূয়সী প্রশংসা করে এক বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ওআইসি কাশ্মীর নিয়ে অনেক নীতি পাস করেছে, তাদের মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই। তারা পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।’ সৌদির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আজ স্পষ্ট করে বলতে পারি, কাশ্মীরের বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের কোনো মতপার্থক্য নেই।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের নতুন এ অবস্থানে সম্পর্কের বরফ হয়তো গলতে পারে। তবে ইতিমধ্যেই যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তার দাগ থেকে যাবে বহুদিন।  সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তান। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সবদিক দিয়েই তারা একে অপরের পাশে রয়েছে বহুদিন ধরে। কিন্তু হঠাৎই যেন ফাটল ধরেছে দুই দেশের পুরনো বন্ধুত্বে! সৌদি নেতৃত্বাধীন ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) থেকে বের হয়ে যাওয়া তো বটেই, বরং সমমনাদের নিয়ে আলাদা জোট গড়ার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানকে দেওয়া ১০০ কোটি ডলারের সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা তুলে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। কিন্তু কী নিয়ে এত দ্বন্দ্ব? কোন স্বার্থে ভাঙতে বসেছে দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক? এ মাসের শুরুর দিকে ভারতশাসিত কাশ্মীর ইস্যুতে ওআইসির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলে পাকিস্তান এবং দাবি পূরণ না হলে তাদের পাশ কাটিয়ে নতুন জোট গড়ার হুমকি দেয় দেশটি। গত ৪ আগস্ট পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি টেলিভিশনে এক বক্তব্যে বলেন, ‘আমি ওআইসিকে আবারও শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি সম্মেলনই আমাদের প্রত্যাশা। আপনারা যদি তা আহ্বান করতে না পারেন তবে আমি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কাশ্মীরের বিষয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াতে এবং নিপীড়িত কাশ্মীরিদের সমর্থন করতে প্রস্তুত ইসলামী দেশগুলোকে নিয়ে বৈঠক ডাকতে বলতে বাধ্য হব।’ গত বছর আগস্টে ভারতশাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই প্রতিবেশী দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা করছে পাকিস্তান। ইসলামাদের এমন প্রকাশ্য হুমকিতে স্পষ্টতই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের নেতৃত্ব। পাকিস্তানের জন্য অর্থনৈতিক এবং সৌদির জন্য ভূ-রাজনৈতিক কারণে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর এ দুটি দেশের মধ্যে ১৭০ কোটি ডলারেরও বেশি বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশই হয়েছে সৌদি থেকে পাকিস্তানের তেল আমদানির বিনিময়ে। পাকিস্তান তাদের চাহিদার প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেলই আমদানি করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে। এ ছাড়া, সৌদিতে কাজ করছেন অন্তত ২৫ লাখ পাকিস্তানি প্রবাসী, যাদের পাঠানো রেমিটেন্স পাকিস্তানের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সর্বশেষ খবর