মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফের উত্তপ্ত হংকং, গ্রেফতার ৩০০

ফের উত্তপ্ত হংকং, গ্রেফতার ৩০০

বিক্ষোভকারীদের অনেককে আটকের পর তাদের রাস্তার পাশে ফেলে রাখে পুলিশ –এএফপি

ফের অশান্ত হংকং। চীনের বিশেষ আইন লঙ্ঘন করে গত দুদিন বহু মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। নির্বাচন বাতিল করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলনে নামেন। প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হংকংয়ের পুলিশ বিভাগ নিজেরাই টুইট করে এ খবর জানিয়েছে। তবে সেখানে বলা হয়েছে, গ্রেফতার নয়, প্রতিবাদীদের আটক করা হয়েছে।

এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীকে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাজারো মানুষ। তবে পুলিশের দাবি, মেয়েটি অবৈধ সমাবেশে অংশ নিয়েছিল এবং ‘সন্দেহজনকভাবে পালিয়ে যাওয়ার’ সময় পুলিশ তাকে ধরে। কিন্তু মেয়েটির পরিবার বলছে, সে স্কুলের খাতা কিনতে বাইরে এসেছিল এবং পুলিশের মুখোমুখি হলে সে ভয় পেয়ে যায়।

এ মাসেই হংকংয়ের প্রতিনিধি সভার নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এই অ্যাসেম্বলিতে ৫০ শতাংশ প্রতিনিধি জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হন। বাকি ৫০ শতাংশ মনোনীত। মনোনীত প্রার্থীরা অধিকাংশই চীনের কমিউনিস্ট শাসকদের অনুগত। তবে গণতন্ত্রপন্থিদের ধারণা ছিল, ভোট হলে বাকি ৫০ শতাংশ আসনের অধিকাংশই তাদের দখলে আসত। বস্তুত, ভোট হলে ক্ষমতা যে গণতন্ত্রপন্থিদের দিকে চলে যাবে, তা বুঝতে পারছিলেন বর্তমান শাসকরাও। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সে কারণেই ভোট আগামী বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, করোনার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে নেতা-কর্মীরা বলেছিলেন যে জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে সরকার প্রাদুর্ভাবটিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। গণতন্ত্রপন্থিদের বক্তব্য, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হংকংয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬০০। অন্য দেশের তুলনায় যা কোনো সংখ্যাই নয়। এই পরিস্থিতিতে করোনার জন্য ভোট পিছিয়ে দেওয়া কোনো যুক্তি হতে পারে না। সে কারণেই রবিবার বিশাল অংশের মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে রাস্তায় নামেন। কিছুদিন আগেই হংকংয়ে চীন বিশেষ আইন চালু করেছে। যে আইনের বলে সব বিক্ষোভ আন্দোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একের পর এক প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। রবিবারেও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, কোনো কোনো জায়গায় আন্দোলনকারীদের হঠাতে গোলমরিচের বল ছোড়া হয়। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্রপন্থি নেতা রবিবার গ্রেফতার হয়েছেন বলে  জানা গিয়েছে।

২০১৯ সাল থেকে চীনের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করছে হংকং। তাদের বক্তব্য, ১৯৮৪ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করছে চীন। যুক্তরাজ্যের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরে হংকংয়ের দায়িত্ব নেয় চীন। কিন্তু হংকংকে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়। বাণিজ্য এবং গণতন্ত্রের বিষয়ে চীনের চেয়ে অনেকটাই আলাদা হংকং। পশ্চিমের সঙ্গে তাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ছিল। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে গণতন্ত্রে আঘাত হানছে চীন, এই অভিযোগে আন্দোলন শুরু করে হংকং। আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে চীন। কিছুদিন আগে তারই জেরে নতুন আইন বলবৎ হয়েছে। কিন্তু কোনো আইনই হংকংয়ে বিক্ষোভ আন্দোলন বন্ধ করতে পারছে না। বরং, দিন যত যাচ্ছে, আন্দোলনের শক্তি তত বাড়ছে।

 

সর্বশেষ খবর