কেউ নমনীয় হওয়ার পক্ষপাতী নন। ফলে বৈঠকের পর বৈঠকেও কোনো সমাধান আসছে না। এ কারণেই লাদাখে ভারত-চীন সংঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই দেশের সেনার মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। তারই মধ্যে সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে কিছু ছবি। যাতে দেখা যাচ্ছে, এক হাতে বর্শা এবং অন্য হাতে অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ভারতীয় সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির জওয়ানরা। প্রশ্ন উঠছে, প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে কি তাহলে আরেকটা গালওয়ান কান্ড ঘটবে? শুধু লাদাখ সীমান্তই নয়, অরুণাচল সীমান্তেও উত্তাপ ক্রমে বাড়ছে। গত সপ্তাহে অরুণাচলে চীন সীমান্তের একটি গ্রাম থেকে ৫ ভারতীয় নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে চীন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো খবর নেই। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, ওই পাঁচ ভারতীয়কে ধরে নিয়ে গেছে চীন। ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনায় এ ঘটনা আরও উত্তপ্ত করবে তা নিশ্চিত বলা যায়।
গত জুন মাসে গালওয়ানে সংঘর্ষ হয়েছিল ভারত এবং চীনের সেনার। প্রায় সারা রাত ধরে সেই সংঘর্ষ চলার পরে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। ভারত দাবি করেছিল, চীনা সেনারও মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চীন তা গোপন রেখেছে। গালওয়ান সংঘর্ষে গোলাগুলি চলেনি। সেনা সূত্র জানিয়েছিল, বড় বড় লাঠির গায়ে কাঁটাতার জড়িয়ে ভারতীয় সেনার ওপর আক্রমণ করেছিল চীন। এরপর ভারত এবং চীনের মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক বৈঠক হয়েছে। বৃহস্পতিবার মস্কোয় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা আছে। এর আগে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লাদাখ সংকট কাটেনি, বরং বেড়েছে। সীমান্তে গুলিও চলে কয়েক দিন আগে। তারই মধ্যে চীনের সেনার নতুন কিছু ছবি হাতে এসেছে।
ভারত এবং চীনের মধ্যে সীমান্তে গুলি না চালানোর চুক্তি আছে। যদিও গালওয়ান কান্ডের পরে ভারতীয় সেনাকে প্রয়োজনে গুলি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বস্তুত গত কয়েক দিনে শূন্যে গুলি চলেছে দুই প্রান্ত থেকেই। কিন্তু গুলির লড়াই শুরু হয়ে গেলে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়। তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ফলে গুলি না চালিয়ে আরও একটি গালওয়ান কান্ডের দিকে পরিস্থিতি এগোচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সে কারণেই বর্শা হাতে চীনের সেনাকে সীমান্তে দেখতে পাওয়া গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে দুটি পাহাড়চূড়া সম্প্রতি ভারতীয় সেনারা দখলে নিয়েছে। ভারতের দাবি ওই দুটি পাহাড় ভারতীয় ভূখন্ডে। চীনের দাবি, ওই দুটি পাহাড়ের দখল নিয়ে ভারত স্থিতাবস্থার নীতি ভেঙেছে। বস্তুত, ওই দুটি পাহাড়চূড়া থেকে সীমান্তের ওপারে চীনের সামরিক কাঠামো দেখতে পাওয়া যায়। চীন সীমান্তের ও পাড়ে কী রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাও দেখতে পাওয়া যায়। ফলে ভারতীয় সেনাকে সেখান থেকে নামাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চীন।