রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কংগ্রেস ঢেলে সাজানো শুরু করলেন সোনিয়া

সাংগঠনিক পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল, সভাপতিকে পরামর্শ দিতে কমিটি

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

কংগ্রেস ঢেলে সাজানো শুরু করলেন সোনিয়া

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে ঢেলে সাজানো শুরু করেছেন দলটির অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এরই অংশ হিসেবে রদবদল করা হয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম ওয়ার্কিং কমিটিতে। পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি এআইসিসির কয়েকটি সাধারণ সম্পাদক পদেও। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্যে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকেও বদল করা হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই দলে আমূল পরিবর্তন আনেন দলনেত্রী সোনিয়া। গত মাসে কংগ্রেসের নেতৃত্ব বদল চেয়ে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়েছিলেন দলটির ২৩ জন বয়োজ্যেষ্ঠ বিক্ষুব্ধ নেতা। চিঠির পরদিনই ওয়ার্কিং কমিটি জরুরি ভিত্তিতে এক ভার্চুয়াল মিটিং করে। বৈঠকে সোনিয়া পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছার কথা জানালে অনেকেই এর বিরোধিতা করেন। তবে সোনিয়া দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামকে জানিয়ে দেন, তিনি আপাতত দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অর্থাৎ আর আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে দলের নতুন সভাপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের এক মাসের মধ্যেই বিভিন্ন পদে পরিবর্তন আনার খবর প্রকাশিত হলো। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলে বিক্ষুব্ধদের অনেকে যেমন বাদ পড়েছেন তেমনি কেউ কেউ বড় দায়িত্বও পেয়েছেন।

দলে সবচেয়ে পরিবর্তনটি হলো সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সিনিয়র নেতা রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা গান্ধী-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গুলাম নবি আজাদকে সরিয়ে দেওয়া। হরিয়ানায় দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকেও আজাদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিবেক বনসলকে। আজাদের মতোই দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মোতিলাল ভোরা, অম্বিকা সোনি ও মল্লিকার্জুন খাড়গে, লুইজিনো ফালেরিওর মতো সিনিয়র নেতাদেরও। পরিবর্তে সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মুকুল ওয়াসনিক, হরিশ রাওয়াত, ওমান চন্ডী, তারিক আনোয়ার, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, জিতেন্দ্র সিং, কে সি বেণুগোপাল ও অজয় মাকেনকে। ওয়ার্কিং কমিটিতেও বদল আনা হয়েছে। কমিটিতে এখন ২২ জন স্থান পেয়েছেন। সোনিয়া গান্ধী ছাড়াও এ কমিটিতে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাহুল গান্ধী, এ কে অ্যান্টনি, আহমেদ প্যাটেল, অম্বিকা সোনি, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, হরিশ রাওয়াত, কে সি বেণুগোপাল, মল্লিকার্জুন খাড়গে, মুকুল ওয়াসনিক, ওমান চন্ডী, অজয় মাকেন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, পি চিদাম্বরম, জিতেন্দ্র সিং, তারিক আনোয়ার, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, গৈখাঙ্গাম, রঘুবীর সিং মীনা ও তরুণ গগৈ। এদিন ছয় সদস্যের এক বিশেষ কমিটিও তৈরি করেন সোনিয়া। যাদের কাজ হবে সোনিয়াকে সংগঠনের কাজে সহায়তা করা। সেখানে স্থান পেয়েছেন বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতা মুকুল ওয়াসনিক। এ ছাড়া ওই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন গান্ধী পরিবারের পাঁচ অনুগত- এ কে অ্যান্টনি, আহমেদ প্যাটেল, অম্বিকা সোনি, কে সি বেণুগোপাল ও রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। যদিও নেতৃত্ব বদল চেয়ে সোনিয়াকে চিঠি লিখেও দলে প্রোমোশন হয়েছে অন্যতম বিদ্রোহী নেতা জিতিন প্রসাদের। তাকে দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এবং আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব। তেলেঙ্গানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাহুলের অনুগত মনিক্কাম টেগোরকে। ঠিক তেমনি পাঞ্জাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হরিশ রাওয়াত, কেরল ও লাক্ষাদ্বীপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারিক আনোয়ার, অসমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জিতেন্দ্র সিংকে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দায়িত্ব পেয়েছেন ওমান চন্ডী। গোটা উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সোনিয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে।

এদিকে বিশ্লেষকদের অভিমত, কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া দলে যে পরিবর্তন আনলেন তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট। তা হলো, যাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই হয় রাহুল অথবা গান্ধী পরিবারের অনুগত। দলের আসন্ন অধিবেশনে পূর্ণ সভাপতির পদে রাহুলের পথ পরিষ্কার করতেই সংগঠনে এ রদবদল বলে তারা মনে করছেন।

সর্বশেষ খবর