সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিতর্কিত এলাকা নিয়ে যুদ্ধে জড়াল আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান

বিতর্কিত এলাকা নিয়ে যুদ্ধে জড়াল আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান

চার দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে চলছে এই দ্বন্দ্ব। জাতিগতভাবে আর্মেনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের এই দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্ব এখন যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। প্রথম দিনেই আজারবাইজানের দুটি হেলিকপ্টার, তিনটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে আর্মেনিয়া। দেশটি জানিয়েছে, আরও তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে তারা। তবে আজারবাইজান এমন দাবি অস্বীকার করেছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এরই মধ্যে দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে আজারবাইজান। নাগোর্নো-কারাবাখে বেশ কয়েকজন বেসামরিক হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান দাবি করেছেন, আজারবাইজানই প্রথমে বিমান এবং আর্টিলারি হামলা চালিয়েছিল। অন্যদিকে আজারবাইজান বলছে, তারা আর্মেনিয়ার হামলার জবাবে পাল্টা হামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, পুরো রণক্ষেত্র বরাবর আর্মেনিয়া গোলা নিক্ষেপ করছিল। তবে দুই তরফ থেকেই জানানো হয়েছে, এই লড়াইয়ে কিছু বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান, দুটি দেশই ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা আলাদা হয়। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের বলেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা। গত জুলাই মাসেও দুই দেশের মধ্যে লড়াইয়ে ১৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বিরাট বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। এই বিক্ষোভ থেকে নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল পুনর্দখলে পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয় সরকারের প্রতি।

দুই পক্ষ কী বলছে : আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, নাগোর্নো-কারাবাখের বেসামরিক বসতির ওপর হামলা শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। হামলা চালানো হয় ওই অঞ্চলের রাজধানী স্টেপনাকার্টে। আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, তারা দুটি হেলিকপ্টার এবং তিনটি ড্রোন গুলি করে ফেলে দিয়েছে এবং তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে। এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা এর উচিত জবাব দেব এবং পরিস্থিতির সম্পূর্ণ দায়িত্ব আজারবাইজানের সামরিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে।’ পরে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুশান স্টেপানিয়ান বলেন, এক নারী ও এক শিশু মারা গেছে এবং আরও যেসব হতাহতের খবর এসেছে সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। নাগোর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ সেখানে সামরিক আইন জারি করেছে। সেখানে সব সক্ষম পুরুষকে সামরিক বাহিনীতে ডাকা হয়েছে। এদিকে আজারবাইজান ঘোষণা করেছে, ‘পুরো রণক্ষেত্র বরাবর সশস্ত্র বাহিনীর পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে যার লক্ষ্য আর্মেনিয়ার বাহিনীর হামলা প্রতিহত করা এবং বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা বিধান।’ আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কয়েকটি গ্রামের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে সেখানে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে এবং সেখানকার অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারা আরও বলেছে, তাদের একটি হেলিকপ্টার নষ্ট হয়েছে। তবে হেলিকপ্টারের ক্রুরা বেঁচে গেছেন। তারা আরও দাবি করেছে, আর্মেনিয়ার ১২টি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আজারবাইজান আর আর্মেনিয়ার এই বিরোধে বহু বছর ধরে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। একটি যুদ্ধবিরতির জন্য এই প্রচেষ্টায় জড়িত আছে মিনস্ক গ্রুপ নামে কূটনীতিকদের একটি দল, যাতে আছেন ফ্রান্স, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। বিবিসি

 

সর্বশেষ খবর