বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

চীনকে ঠেকাতে একজোট যুক্তরাষ্ট্র জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত

চীনকে ঠেকাতে একজোট যুক্তরাষ্ট্র জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত

চীনের প্রভাব ঠেকাতে একজোট আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত। চার দেশের বিদেশমন্ত্রীরা বৈঠকে বসেছেন টোকিওতে। চার দেশের জোটের নাম কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা কোয়াড। মুখে না বললেও মূলত চীনের প্রভাবের মোকাবিলা করার জন্যই একজোট হয়েছে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা। চীন যেভাবে ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করছে ও আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াবার চেষ্টা করছে, তা ঠেকানোর জন্যই চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করছেন টোকিওয়। করোনাকালে ভার্চুয়াল বৈঠক না করে তারা যে একসঙ্গে বসে আলোচনা করলেন, তার থেকেই পরিষ্কার বিষয়টিকে তারা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এই দুই মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন’ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তি দেখিয়ে ২০০৭ সালে এই চার দেশের মধ্যে ‘কোয়াড’ নামে যে সংলাপের সূচনা হয়েছিল, তারই আওতায় এই চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গতকাল টোকিওতে দুই দিনের বৈঠকে বসেছেন। সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রায় চার মাস ধরে চলা বিপজ্জনক উত্তেজনার মধ্যে এ বৈঠক হতে যাচ্ছে।

চীন তাদের প্রধান বৈরী এই চারটি দেশের মধ্যে এই বৈঠক নিয়ে যে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। কোয়াডের এই বৈঠক চলার সময় দুই দিন একই সঙ্গে তিন থেকে চারটি নৌ এবং বিমান মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। গত বছর সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে কোয়াডের বৈঠক হয়েছিল। তারপর আবার হচ্ছে টোকিওতে। কোয়াডের বৈঠকের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আলাদা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে কথা বলেন। লাদাখে সংঘর্ষের পর এই প্রথম মুখোমুখি আলোচনায় বসলেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের পর জয়শঙ্কর টুইট করে বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জয়শঙ্করের কথা থেকে পরিষ্কার, চীনকে ঠেকাতে আমেরিকা ও ভারত একযোগে কাজ করবে। প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘জয়শঙ্কর ও পম্পেওর বৈঠক থেকে এই বার্তাই স্পষ্ট যে দুই দেশ চীনকে ঠেকাতে হাত মিলিয়ে চলবে। তারা স্পষ্টভাবে এই কথাটা না বললেও বলা যেতে পারে, তাদের আসল উদ্দেশ্য বা সুপ্ত বাসনা হলো চীনের মোকাবিলা করা।’ জয়শঙ্কর তার ভাষণে বলেছেন, ভারত আন্তর্জাতিক জলপথের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার ব্যাপারে দায়বদ্ধ। ভারত এখানে আইন, স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক জলপথ ব্যবহারের স্বাধীনতার পক্ষে। সেই সঙ্গে ভারত চায় সব দেশ যেন অন্যের সার্বভৌমত্ব মেনে চলে এবং সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ নেয়। কোথাও চীনের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। কিন্তু কথাগুলো যে চীনকে উদ্দেশ্য করে বলা তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা র‌্যান্ড করপোরেশনের সর্বসাম্প্রতিক এক প্রকাশনায় সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যাস লিখেছেন, পরিস্থিতি এখন অন্যরকম। কারণ, এই চারটি দেশের সবগুলোই এখন চীনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের প্রশ্নে একমত। চীনকে কতটা কোণঠাসা করা উচিত, তা নিয়ে প্রথমে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিধা ছিল কিন্তু এখন তা নেই।’

সর্বশেষ খবর