রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাইডেন জিতলে হয়তো আমি দেশ ছাড়ব : ট্রাম্প

মার্কিন নির্বাচন ২০২০

প্রতিদিন ডেস্ক

বাইডেন জিতলে হয়তো আমি দেশ ছাড়ব : ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের কাছে তিনি যদি পরাজিত হন তাহলে হয়তো আমেরিকা ছাড়বেন। জর্জিয়ার ম্যাকন এলাকায় একটি নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে এই কথাই জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তারপরই এটা তাঁর প্রতিশ্রুতি কিনা জানতে চেয়ে টুইট করেছেন ট্রাম্প বিরোধীরা। মার্কিন নির্বাচনের আর সপ্তাহ দুয়েক বাকি। তার আগে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসছে যে এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনেরই পাল্লা ভারী। ট্রাম্পের থেকে অনেক বেশি জনসমর্থন রয়েছে তাঁর। এই বিষয়টি চোখে পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। আর তাই শুক্রবারের সভা থেকে কিছুটা রসিকতা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি বাইডেন জেতেন তাহলে হয়তো আমি দেশ ছাড়ব। এটা আমি মজা করে বলছি না। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে এত বাজে প্রার্থীর বিরুদ্ধে আর কাউকে লড়তে হয়নি। এই বিষয়টা আমার ওপর খুব চাপ তৈরি করেছে। আপনারা ভাবতে পারছেন এরপর আমি হেরে গেলে কী হবে? আমার পুরো জীবন আমি কীভাবে ভালো থাকব? আমি জানি না কী করব। হয়তো দেশই ছেড়ে দেব।’ ট্রাম্পবিরোধী রিপাবলিকান গোষ্ঠী ‘দ্য লিঙ্কন প্রজেক্ট’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখে, ‘প্রতিশ্রুতি?’

আগাম ভোটের রেকর্ড : ভোটের দিন আসার আগেই রেকর্ড সংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এবারের নির্বাচনে ভিড় এড়িয়ে ভোটাররা আগেভাগেই তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। ইউএস ইলেকশন প্রজেক্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার দিনের শুরুর দিকে সেখানে আগাম ভোট দিয়েছেন কমপক্ষে ২ কোটি ২০ লাখ ভোটার। যেখানে ২০১৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে এমন সময় আগেভাগে ভোট দিয়েছিলেন প্রায় ৬০ লাখ ভোটার। বিবিসির প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, কভিড-১৯ সংক্রমণ এড়াতে প্রবীণরা ভিড় এড়িয়ে আগেভাগে ভোট দিচ্ছেন। তাছাড়া অন্যরাও ভিড় এড়িয়ে নিজেদের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনের দিনকে সামনে রেখে ভোটাররা অগ্রিম ভোট দিচ্ছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার টেক্সাস রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। এর মধ্যেও সেখানে সেখানে পোস্টাল ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। এমন ভোটের প্রথম দিনেই টেক্সাসে সবচেয়ে বেশি ভোটের রেকর্ড গড়েছে। তবে সোমবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রে কলম্বাস দিবস। ফেডারেল ছুটির দিনে সেখানে ভোট পড়েছে ২৬ হাজার ৮৭৬টি। এটি এই রাজ্যের রেকর্ড ভোট। অন্যদিকে ওহাইও রাজ্যেও কমপক্ষে ২৩ লাখ ভোটার তাদের পোস্টাল ভোট দিয়েছিলেন। যা ২০১৬ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও জানানো হচ্ছে, আগাম ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের চেয়ে এগিয়ে ডেমোক্র্যাটরা। রিপাবলিকানদের তুলনায় তারা দ্বিগুণ সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন। আগাম ভোটে ডেমোক্র্যাট সমর্থক নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনিরা অধিক হারে ভোট দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপছন্দ করার কারণে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

আগাম ভোট সম্পর্কে বিবিসি জানিয়েছে, আগেভাগে ভোটে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় ডেমোক্র্যাটরা বিজয় দাবি করে বসতে পারেন না। ডেমোক্র্যাটরা হয়তো আগাম ভোটে এগিয়ে থাকতে পারে। তবে নির্বাচনের দিন রিপাবলিকানরা তাদের বিপুলত্ব প্রদর্শন করবে।

টাকার খেলায়ও বাইডেন এগিয়ে : যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা প্রচারণার জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে পারেন ঢাকঢোল পিটিয়ে। তবে সে অর্থ ব্যয়ের সঠিক হিসাব সাবমিট করতে হয় কর্তৃপক্ষ সমীপে। যারা চাঁদা/ডোনেশন প্রদান করেন তাদেরও ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে জবাবদিহি করতে হয় আয়ের উৎস সম্পর্কে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে জো বাইডেন ১৩০ মিলিয়ন ডলার বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছেন। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী তহবিল ফুলে-ফেঁপে ওঠার মধ্য দিয়ে বাইডেনের বিজয়ের পথ সুসংহত হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বাইডেনের তহবিলে সেপ্টেম্বরে এসেছে ৩৮৩ মিলিয়ন ডলার। অপরদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪৭.৮ মিলিয়ন ডলার। নির্বাচনী তহবিলের ওপর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণরত ফেডারেল সংস্থা শুক্রবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রসঙ্গত, বছরের শুরুতে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট প্রার্থনার বিজ্ঞাপন বাবদ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ঘোষণা করেছিল।

তবে রিপাবলিকানদের সে প্রত্যাশা এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। করোনার প্রকোপ মহামারীতে রূপ নেওয়া এবং করোনা রোধে ট্রাম্পের সীমাহীন উদাসীনতার ব্যাপারটি অনেক বিত্তশালীকেও হতাশ করেছে। অনেকেই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন ট্রাম্পের কাছ থেকে। সর্বশেষ এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জরিপে বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, জাতীয়ভাবে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন ১১% এগিয়ে রয়েছেন। এদিকে ১৬ অক্টোবর জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ম্যাকোন শহরে আয়োজিত নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে বাইডেনকে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রার্থী বলেছেন ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন আসছে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীর কাছে হেরে গেলে তাঁকে হয়তো দেশ থেকে চলে যেতে হবে।  তিনি আরও বলেন, এসব নিয়ে কৌতুক করা ঠিক হচ্ছে না। আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সঙ্গে তিনি নির্বাচনে লড়ছেন। এ কারণেই তিনি বেশ চাপে আছেন। উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নির্বাচনে হারলে কী হবে আপনারা ভাবতে পারেন? সারা জীবন আমি কী করব? আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রার্থীর কাছে হারার বিষয়টা বাকি জীবন আমি কীভাবে বয়ে বেড়াব? এ নিয়ে খুব ভালো বোধ করব না। জানি না, হয়তো আমাকে দেশটাই ছেড়ে যেতে হবে।’

গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনার এক সমাবেশে বলেছিলেন বাইডেনের সঙ্গে হেরে গেলে কী করবেন, তা তিনি জানেন না। হয়তো কারও সঙ্গে আর কোনো দিন কথাই বলবেন না।

সর্বশেষ খবর