রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নিজস্ব পতাকা ফিরিয়ে না দিলে কাশ্মীরে তেরঙা তুলব না

সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির ঘোষণা

কলকাতা প্রতিনিধি

নিজস্ব পতাকা ফিরিয়ে না দিলে কাশ্মীরে তেরঙা তুলব না

সংবিধান অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা এবং রাজ্যটির নিজস্ব পতাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে আমরা জম্মু-কাশ্মীরে তেরঙা (ভারতের জাতীয় পতাকা) তুলব না। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিলেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) সভাপতি মেহবুবা মুফতি। উপত্যকায় গত বছরের ৫ আগস্টের পূর্বের অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।

গত বছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে ওই রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রীয়শাসিত অঞ্চলে (জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ) ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় মোদি সরকার। এরপরই জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব পতাকাও শ্রীনগরে অবস্থিত রাজ্যটির সচিবালয় থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর যেহেতু ভারতেরই একটি অভিন্ন অংশ তাই উপত্যকায় একটি পতাকা থাকবে- তা হলো ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকা। সংবাদ সম্মেলনে নিজের সামনে রাখা রাজ্যের পতাকাটিকে দেখিয়ে মেহবুবা বলেন, ‘আমার সামনেই আমার পতাকা আছে। যখন এই পতাকা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তখনই অন্য কোনো পতাকা (তেরঙ্গা) স্পর্শ করব। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের নিজস্ব পতাকা ফিরে না পাচ্ছি, ততদিন আমাদের হাতে অন্য কোনো পতাকা উঠবে না। এই পতাকার কারণে দেশের পতাকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাই জম্মু-কাশ্মীরের পতাকা যখন আমাদের হাতে আসবে কেবল তখনই ওই (তেরঙ্গা) পতাকাও উত্তোলন করব।’

জাতীয় পতাকা নিয়ে মেহবুবার এই মন্তব্যের পরই তাকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছে বিজেপি। জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবিন্দর রায়না জানান, ‘আমি লেফটেন্যান্ট গর্ভনর মনোজ সিনহাকে আর্জি জানাব যে, ‘মেহবুবার বিরুদ্ধে যেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা আমাদের মাতৃভূমি ও জাতীয় পতাকার জন্য প্রতিটি রক্তবিন্দু দিতে রাজি। জম্মু-কাশ্মীর আমাদের দেশের অবিচ্ছেদ্দ অংশ। তাই সেখানে কেবল দেশের জাতীয় পতাকাই উত্তোলন করা হবে।’ মেহবুবার এই মন্তব্যকে সমর্থন করেনি কংগ্রেসও। জম্মু-কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি রবিন্দর শর্মা জানান, ‘আমাদের সমাজে এই ধরনের মন্তব্য অসহ্য ও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিবৃতি উপত্যকার মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছে।’ 

দীর্ঘ প্রায় ১৪ মাস গৃহবন্দী থাকার পর গত ১৩ অক্টোবর মুক্তি পান মেহবুবা। এরপর তিনি গত শুক্রবার প্রথম সংবাদ সম্মেলন করলেন। আর ওই সংবাদ সম্মেলন থেকেই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতত্বাধীন সরকারকে তীব্র নিশানা করেন তিনি।

মেহেবুবা বলেন, ‘উপত্যকার সব কিছু বিজেপি নষ্ট করেছে। কাশ্মীরের মানুষদের ক্ষতি হয় এমন সব সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করছে। তারা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে চায় না। তারা কেবল এই অঞ্চলটি ভোগ করতে চায়। মেহবুবা বলেন, আমরা ভারতের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষতাকে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান ভারতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না। তারা আসলে দেশের সংবিধানকে বিজেপির ইশতেহারে পরিণত করতে চাইছে কিন্তু এটা বেশিদিন চলবে না। এই দেশ সংবিধান মেনে চলবে, বিজেপির ইশতেহার মেনে নয়।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বছরে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়েও কেন্দ্রকে তোপ দাগেন মেহবুবা। পিডিপি নেত্রী বলেন, ‘...এমনকি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ মাথা পিছু জিডিপিতে আমাদের ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। বেকারত্ব হোক বা অন্য যে কোনো ইস্যু- সব ক্ষেত্রেই তারা (বিজেপি সরকার) চূড়ান্ত ব্যর্থ। তারা যখন সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ তখনই তারা কাশ্মীর ও ৩৭০ ধারাকে তুলে ধরার চেষ্টা করে।’ উল্লেখ্য, উপত্যকায় ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনার দাবিতে জম্মু-কাশ্মীরের ছয়টি বড় রাজনৈতিক দলের জোট গঠিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর