৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখনো যারা ডাকযোগে ভোট দিচ্ছেন তাদের ব্যালট সময়মতো নির্বাচন কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আজকাল যারা ব্যালট ডাকে পাঠাচ্ছেন তাদের ভোট হয়তো গোনাই হবে না। সময়মতো ব্যালট না পৌঁছালে সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। খবর আল জাজিরার। করোনাভাইরাসের কারণে ডাকযোগে আগাম ভোট পাঠাতে আগ্রহী লাখ লাখ ভোটার। ৬ কোটিরও বেশি আগাম ভোট পড়েছে যার বড় অংশ এসেছে ডাকে। কিন্তু শামুক গতির ডাকসেবা নিয়ে ভোটারদের মনে নতুন প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন, তাদের হাতে সময়মতো ব্যালট না পৌঁছালে সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। তাই ডাকে ব্যালট না পাঠিয়ে নিজে উপস্থিত হয়ে ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যালট ভরা খাম পৌঁছে দেওয়ার হার ৮৫ শতাংশ। বাকি ব্যালট পৌঁছাতে আরও বেশি সময় লাগছে। ১ শতাংশের কিছু কম ব্যালট অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। সে হিসেবে এখন ডাকযোগে ব্যালট পাঠালে তা সময়মতো না পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ সময়মতো ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করার পাশাপাশি ভোটারদের মনে করিয়ে দেন তারা অকল্পনীয় পরিমাণ ডাক পাচ্ছেন। ডাক বিভাগের কর্মকর্তা পল বলেন, ‘এত বেশি ব্যালট বিপত্তি তৈরি করেছে।’ দ্রুত এত বেশি ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা দেশটির ডাক বিভাগের আছে কিনা তা ভোটারদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট ক্লাস মেইল বা দ্রুত গতির ডাক পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেও তাতে সময় লাগে দুই দিন। যদি ৩ নভেম্বরের দুই দিন আগে ১ কোটি ভোট ডাকযোগে পাঠানো হয় তাহলে ১৪ লাখ ব্যালট হয়তো সময়মতো পৌঁছাবে না। দেশটির ডাক বিভাগ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেও এই পরিসংখ্যান সময়মতো ব্যালট পৌঁছানোর বিষয়ে সংশয় বাড়িয়েছে। ডাকযোগে পাঠানো আগাম ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো অভিযোগ করছেন। ডাকে পাঠানো ব্যালটের নিরাপত্তা নেই ও ভোট কারচুপির আশঙ্কা করেছেন তিনি।
হঠাৎ ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা : শেষ সপ্তাহে এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের সঙ্গে জনপ্রিয়তার ব্যবধান ট্রাম্প কমিয়ে এনেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারণা বাড়িয়েছেন। নতুন বিচারপতি অ্যানি ব্যারেটকে শপথ পড়িয়ে নির্বাচনী কৌশলেও এগিয়ে গেছেন তিনি। জনপ্রিয়তায় জর্জিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডায় বাইডেনের কাছাকাছি এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেনসিলভেনিয়ায় নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ঘনঘন সমাবেশ করছেন ট্রাম্প। মিশিগানেও ট্রাম্পের অবস্থান ক্রমান্বয়ে দৃঢ় হচ্ছে। যদিও ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ১৩টি স্যুইয়িং স্টেটেই বাইডেন এগিয়ে ছিলেন।
শপথ নিলেন ব্যারেট : ট্রাম্প মনোনীত অ্যামি ব্যারেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে শপথ নিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা কোনোভাবেই এই চূড়ান্ত নিয়োগ ঠেকাতে পারেনি। স্থানীয় সময় গত সোমবার রাতে সিনেটে ৫২-৪৮ ভোটে ব্যারেটের নিয়োগ অনুমোদিত হয়। রিপাবলিকান দলীয় একজন সিনেটর ট্রাম্পের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। নিয়োগ অনুমোদনের পর ট্রাম্প আর দেরি করেননি। সেদিন রাতেই পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনী প্রচার শেষে ফেরার পর ট্রাম্প অ্যামি ব্যারেটের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী দিনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিতে পারেন ব্যারেট। যার মধ্যে গর্ভপাতের মতো বিষয়ও আছে। সব মিলিয়ে ব্যারেটের শপথ গ্রহণ নির্বাচনের আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অন্যরকম এক জয় এনে দিল।