বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্রাম্প ব্যস্ত কারচুপির অভিযোগ নিয়ে

প্রতিহত করার উপায় জানাবেন বাইডেন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

শুধু ব্যক্তি যো বাইডেন কিংবা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নয়, ট্রাম্প যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন গোটা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ছুটে বেড়াচ্ছেন ল’ ফার্মে। ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন স্টেটে ভোট চুরি হয়েছে বলে মামলার চেষ্টা করছেন।  চুরির সমর্থনে কোনো প্রমাণ না থাকলেও ট্রাম্পের অনুগত অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন মামলাগুলো গ্রহণ করতে। ক্লিভল্যান্ডের বিখ্যাত ল’ ফার্ম জোন্স ডে নিয়েছে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব। সুপারভাইজ করছেন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি। বাইডেন যেসব স্টেটে বেশি ভোট পেয়েছেন সেগুলোতেই ভোট চুরির মামলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সর্বসাধারণকে সতর্ক এবং তা প্রতিহত করার উপায় নিয়ে আজ (বুধবার) বাংলাদেশ সময় সকালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যো বাইডেন বক্তব্য দেবেন। নিজ বাসভূমি দেলওয়ারে স্টেটের উইলমিংটন সিটি থেকে এ বক্তব্যের সময় পাশে থাকবেন নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতির জন্য ইতিমধ্যেই গঠিত ‘ট্র্যাঞ্জিশন টিম’র কর্মকর্তারাও একইসঙ্গে কাজ শুরু করলেও হোয়াইট হাউসের কেউ যাতে সহযোগিতা না করেন সে নির্দেশ জারি করা হয়েছে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো প্রশাসনে। এরই মাঝে ট্রাম্পের উদ্ভট অভিযোগকে আমলে নেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রী তথা অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার যে নির্দেশ সোমবার জারি করেছেন, তাতে বিব্রত বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও। বিচার বিভাগে ইলেকশন ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রধান রিচার্ড পিলজার পদত্যাগ করেছেন তাৎক্ষণিকভাবে। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা ভোট-কারচুপি করেছেন এমন অভিযোগের সমর্থনে ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণাদি না থাকায় কীভাবে দায়েরকৃত মামলা আমলে নেবে-এ প্রশ্নের মধ্যেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

করোনায় নাজুক অবস্থায় পড়া স্বল্প এবং মাঝারি আয়ের আমেরিকানদের শেষ ভরসা ওবামা কেয়ার (অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট) অ্যাক্ট পুরোপুরি বাতিলের চেষ্টা পুনরায় শুরু করেছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবারই ঝুলে থাকা এ সংক্রান্ত মামলাটির কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে। ট্রাম্প এখন নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, বাইডেনের আজ সকালের বক্তব্যে সর্বশেষ উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং বর্তমান অবস্থায় আমেরিকানদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাবেন। একইসঙ্গে তিনি ট্রাম্পের প্রতিও আহ্বান রাখবেন নির্বাচণের বৈরিতা ভুলে গিয়ে আমেরিকার স্বার্থে তাকে সহযোগিতার জন্য। টেক্সাস থেকে ক্যালিফোর্নিয়া-পেনসিলভেনিয়া-মিশিগান সর্বত্র মামলার উদ্ভব না ঘটিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাইডেনকে সহযোগিতার অনুরোধও করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের অঙ্গীকার ছিল ওবামা কেয়ার বাতিল করার। কিন্তু আজ অবধি বিকল্প কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি ট্রাম্প।

এদিকে পুনরায় জনরায় লাভে ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ‘ইউএস গ্লোবাল চেইঞ্জ রিসার্চ প্রোগ্রাম’র নির্বাহী পরিচালক মাইকেল কুপারবার্গকেও সোমবার বরখাস্ত করেছেন। এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক ইসপার এবং এফইআরসি চেয়ারম্যান নিল চ্যাটার্জিকে বরখাস্ত করা হয়। জানা গেছে, এরা ট্রাম্পের অ-আমেরিকান মনোভাবের সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি।

বিদায়ী প্রেসিডেন্টের এমন গোঁয়ার্তুমি এবং অবিশ্বাস্য আচরণে বাইডেন টিম থেমে না থেকে তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ক্ষমতা গ্রহণ এবং পরবর্তী প্রশাসনের কাঠামো নিয়ে কাজ করছেন বলে বাইডেন টিমের একাধিক সূত্র জানায়। তারা ক্যাবিনেট সাজানোর পরিকল্পনা মাথায় রেখেই দায়িত্ব গ্রহণের টিম তৈরির কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছেন বলেও জানা গেছে। স্মরণকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরামর্শকে প্রাধান্য দিয়েই সবকিছু সাজানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রিপাবলিকান পার্টির বড় একটি অংশ এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের উদ্ভট মামলার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা জানান দেননি। তবে যে কোনো উপায়ে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে বিঘ্ন ঘটানোর প্রবল চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন ট্রাম্পসহ রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক কর্মকর্তা। তবে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ট্রাম্পের সেই ল’ ফার্মের কর্মকর্তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রমাণহীন অভিযোগের মামলা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত এগুলো খারিজেরও আশঙ্কা করেছে ল’ ফার্ম।

সর্বশেষ খবর