কিছুদিন আগে চীনের এক সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে দাবি করেছিলেন, ভুটান লাগোয়া চীন সীমান্তে নতুন গ্রাম তৈরি করে ফেলেছে শি জিন পিংয়ের সরকার। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারত। দেখা গিয়েছিল সীমান্তে নয়, ভুটানের ভিতর প্রায় দুই কিলোমিটার ঢুকে ওই অবকাঠামো তৈরি করেছে চীন। সেখানেই তৈরি হয়েছে নতুন গ্রাম। এবার উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, দোকলাম অঞ্চলে একটি নয় কিলোমিটারের রাস্তাও তৈরি করে ফেলেছে চীন। যে রাস্তা ভারতের সিকিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এ কারণে উত্তেজনার পারদ আরও ওপরে ওঠছে ভারত এবং চীনের মধ্যে।

লাদাখ সংঘাত এখনো সম্পূর্ণ কাটেনি। সর্বশেষ বৈঠকে দুই দেশের সেনা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে এসেছেন, এপ্রিলের আগে দুই দেশের যা অবস্থান ছিল, সেখানে ফিরে যাবে। কিন্তু ঠা ার মধ্যে সে কাজ হবে, না কি ঠা া কমলে দুই দেশ ফিরতে শুরু করবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, মধ্যবর্তী সময়ে ফের লাদাখে উত্তাপ ছড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তারই মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্ব কোণে নতুন করে চীনের সঙ্গে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অতীতে যে এলাকায় দুই দেশের সংঘাতও হয়েছে। বছরকয়েক আগেই ডোকলামে ভারত এবং চীনের সংঘাত হয়েছিল। দোকলাম ভারতীয় সেনাদের জন্য অত্যন্ত কৌশলগত একটি জায়গা। দোকলাম মালভূমি ভুটানের অংশ হলেও, তা ভারতের সিকিম লাগোয়া। এমনিতেই ভুটানের সুরক্ষায় ভারতীয় সেনারা কাজ করে। ভুটানে ভারতীয় সেনা ঘাঁটি রয়েছে। ফলে দোকলাম নিয়ে ভারতীয় সেনারা সব সময়ই সজাগ থাকে। বছরকয়েক আগে সেই ডোকলামেই একটি রাস্তা তৈরির চেষ্টা করেছিল চীন। ভারতীয় সেনারা চীনের রাস্তা নির্মাণকর্মীদের সেই কাজে সরাসরি বাধা দেয়। এরপর প্রায় দুই মাস দুই দেশের সেনাদের মধ্যে স্ট্যান্ড অফ হয়। কেউ কাউকে জমি ছাড়তে চায়নি। শেষ পর্যন্ত উহানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শি জিন পিংয়ের বৈঠকের পর পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হয়। ফের সেই দোকলাম নিয়েই উত্তেজনা শুরু হয়েছে। ভারত এর আগে দাবি করেছিল চীন দোকলাম অঞ্চলে ভুটানের ভূখন্ডের ভিতরে গ্রাম তৈরি করেছে। এ বিষয়ে দিল্লিতে অবস্থিত ভুটান দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডর অবশ্য বলেছিলেন, এমন কোনো ঘটনা তার জানা নেই। যদিও  সীমান্ত নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। ভুটানের সংবাদমাধ্যম অবশ্য জানিয়েছে, গত কিছুদিন ধরে চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা চলছে ভুটান সরকারের। তারই মধ্যে চীনের গ্রাম তৈরির বিষয়টি সামনে আসে। এই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই স্যাটেলাইট ইমেজে ধরা পড়ল, তোর্সা নদীর ধার ধরে চীন একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করছে। এই রাস্তাটি পুরো তৈরি হয়ে গেলে সিকিম সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে চীনের সেনারা। শুধু তাই নয়, ওই রাস্তা যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখান থেকে ভারতীয় সেনা ঘাঁটির ওপর নজরদারি চালানো সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে দোকলাম সীমান্তে ফের ভারতের সেনাদের সঙ্গে চীনের সেনাদের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। -ডয়চে ভেলে