মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দিল্লি ঘিরে ফেললেন কৃষকরা

হাজারো কৃষক ট্র্যাক্টরে করে মাস দুয়েকের খাবার সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে শামিল

ভারতের কৃষকরা তাদের দাবি পূরণে সহসাই রাজপথ ছাড়ছেন না। আর কৃষকরা এখন দিল্লি কার্যত ঘিরে ফেলেছেন। রাজধানীতে ঢোকার পাঁচটি প্রধান রাস্তা আছে। তার মধ্যে দুটি পুরোপুরি এবং একটি আংশিকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাকি দুটি ঢোকার রাস্তাতেও কৃষক জমায়েত হয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে তাঁরা দিল্লিতে আসার চেষ্টা করছেন। পুলিশের অবরোধ, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান অগ্রাহ্য করে তাঁরা দিল্লির সীমান্তে চলে এসেছেন। কীভাবে কৃষকদের সামলানো হবে তা নিয়ে রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরসহ চার-পাঁচজন মন্ত্রী। গতকাল সকালে আবার অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তোমর। তারপর সরকার জানিয়েছেন, তারা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি। কিন্তু কৃষকদের দিল্লিতে ঢোকা চলবে না। তাঁদের চলে যেতে হবে দিল্লির সীমান্ত থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরের বুরারিতে।  কিন্তু কৃষকরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। হাজার হাজার কৃষক হরিয়ানার টিকরি ও সিংঘু সীমানা বন্ধ করে দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের গাজিপুর সীমানাও আংশিকভাবে বন্ধ। পুলিশের পক্ষ থেকে মানুষকে বিকল্প পথে দিল্লিতে ঢুকতে বলা হয়েছে। এই শীতের মধ্যেও কৃষকদের লক্ষ্য করে জলকামান ছোড়া হচ্ছে। শিবসেনা বলেছে, এই শীতে কৃষকদের বিক্ষোভে জলকামান ব্যবহার করা খুবই নিষ্ঠুরতার পরিচয়। কৃষকরা দিল্লির ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে চান। সরকারের সঙ্গে আলোচনা চান। ৫০০টির মতো কৃষক সংগঠন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তার মধ্যে বামপন্থি সংগঠনও আছে। হাজার হাজার কৃষক ট্র্যাক্টরে করে মাস দুয়েকের খাবার সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। তাঁরা এসেছেন মূলত ছয়টি রাজ্য থেকে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখ-, কেরালা ও রাজস্থান থেকে। তাঁরা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। মোদি সরকার সম্প্রতি কৃষি আইন বদল করে করপোরেট চাষ ও কৃষকদের কাছ থেকে যত খুশি ফসল কেনার অনুমতি দিয়েছে। করপোরেটগুলো কৃষকদের আগাম টাকা দিয়ে কী চাষ করতে হবে সেটাও বলে দিতে পারবে। এই ছয় রাজ্যের কৃষকদের ধারণা, এর ফলে তাঁদের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে। তাঁরা শেষ পর্যন্ত করপোরেটের দাসে পরিণত হবেন। সুবিধা হবে বড় সংস্থাগুলোর। কয়েক বছরের মধ্যে কৃষিতে তাঁদের মনোপলি স্থাপিত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বারবার বলা হচ্ছে, এতে আদতে কৃষকদের লাভ হবে। কারণ তাঁরা বেশি দামে জিনিস বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকদের দাবি, তা হলে ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যে ফসল কেনা বাধ্যতামূলক করা হোক। সেই দাম না দিলে করপোরেটগুলোকে শাস্তি পেতে হবে, সেই ব্যবস্থা আইনে রাখা হোক।

কৃষকদের ভুল বোঝানো হচ্ছে- মোদি : দিল্লিতে কৃষক বিক্ষোভের মধ্যেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন ‘নতুন কৃষি আইন নিয়ে বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে, কৃষকদের ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। গতকাল নিজের সংসদীয় কেন্দ্র বারানসি থেকে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত ৭৩ কিমি বিস্তৃত হাইওয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নতুন কৃষি আইনের পক্ষে জোর সওয়াল করে এসব কথা বলেন তিনি। মোদি বলেন, ‘একটা অঞ্চলে যখন কানেকটিভিটি উন্নতি হয়, তখন কৃষকরাও উপকৃত হন। বৃহত্তর বাজারের ফলে কৃষকদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পায়। মনে রাখতে হবে যে, কৃষকদের স্বার্থেই সংস্কার করা হচ্ছে।

এতে তাদের আরও নতুন নতুন দিক খুলে যাবে। যে ব্যক্তি বেশি দাম দেবেন বা সুবিধা দেবেন তার কাছেই কি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করা উচিত নয়?’

সর্বশেষ খবর