বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের ঢুকতেই দিল না চীন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের ঢুকতেই দিল না চীন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) চীন-প্রীতি অজানা কিছু নয়। করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল যে চীনের উহান, তা একপ্রকার নিশ্চিত হলেও বেইজিংয়ের পক্ষেই বারবার কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রিয়েসুস। কিন্তু এবার সেই মধুচন্দ্রিমা হয়তো শেষ। কারণ, আন্তর্জাতিক সংস্থাটির করোনা বিশেষজ্ঞ দলটিকে দেশে ঢুকতেই দিল না চীন। ফলে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গেব্রিয়েসুস। বছরখানেক আগে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। এ নিয়ে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ প্রায় গোটা বিশ্ব বারবার চীনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কিন্তু সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উহানকে করোনার উৎসস্থল হিসেবে কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না কমিউনিস্ট দেশটি। এই পরিস্থিতিতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে দেখতে চলতি সপ্তাহেই ১০ জনের বিশেষজ্ঞ দলের যাওয়ার কথা ছিল উহানে। এমনকি দলের দুই সদস্য চীনের উদ্দেশে রওনা দিলেও তাদের বেইজিংয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে হু।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দুজনের মধ্যে একজন ফিরে গেছেন ও অন্যজন ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে তৃতীয় আরেকটি দেশে অবস্থান করছেন। হু জানিয়েছে, ভিসা না পাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর বেইজিং করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে তদন্তের বিষয়ে রাজি হয়েছিল। সে অনুযায়ী ভ্রমণের উদ্দেশ্য, তারিখ ইত্যাদি সব বিস্তারিত সাজানো হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানিয়েছেন, চীন তদন্তকারী দলের যাওয়ার বিষয়ে অনুমতি না দেওয়ায় তিনি ‘অত্যন্ত অসন্তুষ্ট’। তিনি আরও জানিয়েছেন, এ ঘটনার কারণে দলের অন্যরা যাত্রা শুরু করতে পারেননি। চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে হু প্রধান মঙ্গলবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চীন ভিসার প্রক্রিয়াগুলো দ্রুততার সঙ্গে সম্পাদন করছে বলে আশ্বস্থ করেছে। মিশনটি ডব্লিউএইচও ও আন্তর্জাতিক টিমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মন্তব্য করে এটি চীনের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, আমেরিকাসহ একাধিক দেশ করোনা মহামারীর জন্য চীনকে দায়ী করে আসছে। আর সেই অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তা প্রমাণ হয়েছে একাধিক গোপন নথি ফাঁস হওয়ায়। কয়েক দিন আগে চীনে করোনা মহামারী নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সিএনএন। সেখানে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের রিপোর্টের ভিত্তিতে দাবি করা হয়, প্রথমদিকে করোনা সংক্রমণের কথা গোপন রেখেছিল হুবেই প্রশাসন। স্থানীয় চীকিৎসকদের মতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত হুবেইয়ে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯১৮। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানে এর অর্ধেক দেখানো হয়েছিল। ফলে, কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। বলে রাখা ভালো, ২০১৯ সালের নভেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী ইউহান শহরে প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। হুবেই প্রভিনশিয়াল সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল প্রিভেনশনের এক কর্মীর কাছ থেকে ১১৭ পাতার একটি গোপন রিপোর্ট সংগ্রহ করে সিএনএন। তারপর অন্তত ছয়জন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সেই নথি খতিয়ে দেখে সেগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে দাবি সংস্থাটির।

সর্বশেষ খবর