করোনা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার ঠিক এক বছর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে এর প্রতিষেধক বা টিকা প্রয়োগের। আর অবশ্য এই দৌড় শুরু হয়েছে উন্নত দেশগুলোতে। উন্নয়নশীল দেশগুলো চেষ্টা করছে টিকা আমদানির। আর অনুন্নত দেশগুলো স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে টিকা পাওয়ার। জানা যাক টিকা কার্যক্রমের কী অবস্থা দেশে দেশে;
যুক্তরাষ্ট্র : করোনার টিকা বিতরণের মোট সংখ্যায় সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র। ৫৩ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন। কিন্তু শতকরা হিসেবে গত বুধবার পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন এক দশমিক ছয় শতাংশ।
যুক্তরাজ্য : ৮ ডিসেম্বর বায়োএনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম চালু করে যুক্তরাজ্য। তাদের হালনাগাদ তথ্যটি ২৭ ডিসেম্বরের। সেই হিসাবে সাড়ে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে তারা, যা মোট জনগোষ্ঠীর সোয়া এক ভাগের বেশি।সংযুক্ত আরব আমিরাত : ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সোয়া আট ভাগের বেশি মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে। মোট ৮ লাখ ২৬ হাজার ডোজ টিকা দিয়েছে তারা এই সময়ের মধ্যে।
চীন : গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনোফার্মের টিকার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে চীন। শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে আরও কয়েকটি। তবে অনুমোদনের আগে পরীক্ষা পর্যায়েই সেসব টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষের দেহে। বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিতে শতকরা হিসাবে সেটি একভাগেরও কম। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা দেশটির।
রাশিয়া : ট্রায়াল শেষের আগেই বিশ্বে সবার আগে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে রাশিয়া। ৫ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি এরই মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে স্পুটনিক ফাইভ নামের সেই টিকা দিয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক ভাগের কম।
জার্মানি : ২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের দেশগুলো একজোটে বায়োএনটেক-ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে জার্মানি। ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে ৩ লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন। জনসংখ্যার হিসাবে এটি এক ভাগের প্রায় অর্ধেক।
ইতালি : মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে জার্মানির চেয়ে ইতালি কিছুটা এগিয়ে। করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ভোগা দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক পাঁচ-এক ভাগ।
কানাডা : ১৬ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু করে কানাডা। ১ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত সেখানে করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন, যা জনসংখ্যার দশমিক চার-তিন ভাগ।
স্পেন : ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে ১ লাখ ৩৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে তা উল্লেখযোগ্য নয়।
ইসরায়েল : করোনার টিকা কার্যক্রমে সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইসরায়েল। বায়োএনটেক-ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তারা ১৯ ডিসেম্বর থেকে। ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। অর্থাৎ, ১৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে এরই মধ্যে টিকার আওতায় এনেছে ইসরায়েল, যা সবার চেয়ে বেশি।
বাহরাইন : পারস্য উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনের প্রতি ১০০ জনের চারজন এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন। এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের পরই তাদের অবস্থান। মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি।
বাকি বিশ্ব : ইউরোপের সব দেশেই করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশও তড়িঘড়ি করেই কার্যক্রম শুরু করেছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে ৫২ হাজার ডোজ বিতরণ করেছে। তবে এই দৌড়ে এখনো যোগ দিতে পারেনি সিংহভাগ উন্নয়নশীল ও কোনো অনুন্নত দেশ। সব মিলিয়ে বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র দশমিক দুই ভাগ টিকা বিতরণ করা হয়েছে। ডয়চে ভেলে