সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভারত-চীন যুদ্ধ হলে ধ্বংস হবে পৃথিবী

ভারত-চীন যুদ্ধ হলে ধ্বংস হবে পৃথিবী

পাশাপাশি দুই দেশ আকারে বড় আবার পারমাণবিক শক্তিধরও। এই দুই দেশ হলো ভারত ও চীন। বছরকয়েক ধরে দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দোকলাম নিয়ে তো কয়েক মাস ধরে যুদ্ধাংদেহী অবস্থানে দুই দেশ। অনলাইন ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে নামে এক গণমাধ্যম এক প্রতিবেদনে বলেছে এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে তাতে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে এবং তা গোটা বিশ্বকেই ধ্বংস করে দেবে। যদিও দুই দেশের মধ্যে এর আগে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। প্রতিবেদনটি লিখেছে কিলি মিজোকামি।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এই দুই দেশের মধ্যে যদি যুদ্ধ হয় তাহলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল আন্দোলিত হবে। এর ফলে উভয়পক্ষে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতি হবে। এক্ষেত্রে ভৌগোলিক এবং জনসংখ্যাতত্ত্বের দিক দিয়েও একটি ব্যতিক্রমী ভূমিকা থাকবে। তবে এসব জিনিস মাথায় রেখে নীতি নির্ধারকরা যুদ্ধ হলেও তা হতে পারে সীমিত পরিসরে করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারত ও চীনের মধ্যে অন্তত দুুটি স্থানে অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে। তার একটি উত্তর ভারত-পশ্চিম চীন এবং পূর্ব ভারত-দক্ষিণ চীন। এসব অঞ্চলে উভয় দেশের মধ্যে ভূখন্ডগত বিরোধ অনেক পুরনো। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে উভয় ফ্রন্টে আক্রমণ করেছিল চীন। এতে মাসব্যাপী একটি যুদ্ধ শুরু হয়। ‘এ চাইনিজ-ইন্ডিয়ান নিউক্লিয়ার ওয়ার উড রুইন দ্য হোল প্লানেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি আরও লিখেছেন, উভয় দেশই ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ বা আগে হামলা চালানোর নীতি গ্রহণ করে না। ফলে এক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা কম। উভয় দেশেরই জনসংখ্যা অনেক বেশি। দুটি দেশেরই রয়েছে কমপক্ষে ১৩০ কোটিরও বেশি মানুষ। তারপরও যদি ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ হয়, তাহলে তা ১৯৬২ সালের মতো হবে না। এবার যুদ্ধ হলে উভয়পক্ষই আকাশপথে বড় অপারেশনে যেতে পারে। দুই দেশের কাছেই কৌশলগত এমন শক্তি রয়েছে বিমানবাহিনীতে, যা এ এলাকায় উড়ে গিয়ে মিশন সম্পন্ন করে নিজের দেশে ফেরত আসার সক্ষমতা রাখে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের যেসব ইউনিট অবস্থান করছে ল্যানঝৌ মিলিটারি রিজিয়নে, তা উড়ে যেতে পারে পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ডে। সম্প্রসারিত চেংদু মিলিটারি অঞ্চল থেকে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে হামলা চালাতে পারে। ল্যানঝৌতে আছে চীনের জে-১১ এবং জে-১১বি যুদ্ধবিমান। আছে কৌশলগত এইট-৬ বোমারুর দুটি রেজিমেন্ট। এ ছাড়া আছে জে-৭ এবং জে-৮ যুদ্ধবিমান। অন্যদিকে চীনকে মোকাবিলায় আকাশপথের যুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার জন্য চীনের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভারতের বিমান বাহিনী। চীন তার ফ্রন্টিয়ার সেনাদের দূরত্ব বজায় রেখে মোতায়েন করে। তিব্বত থেকে মাত্র ২১৩ মাইল দূরে অবস্থান নয়াদিল্লির। ভারতের বিমান বাহিনীর হাতে আছে ২৩০টি সু-৩০এমকে১ ফ্লাঙ্কারস, ৬৯টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া তাদের হাতে আছে আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র। ফলে চীনের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভারত। দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য সক্ষমতা রয়েছে ভারতের। একটি ফ্রন্টে রয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। অন্যদিকে চীন। এ ছাড়া বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ও উচ্চ মূল্যবান বিভিন্ন টার্গেট সুরক্ষিত রাখতে ভারত এসব স্থানে মোতায়েন করছে আকাশ-মধ্যম পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। তবে চীনের ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের যে বাড়বাড়ন্ত আছে, ভারত তা থামিয়ে দিতে পারবে না। তারপরও ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে সবচেয়ে খারাপ, নৃশংস এবং স্বল্পমেয়াদি। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। ক্ষমতার ভারসাম্য এবং ভৌগোলিক বিষয়াদির পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায়, দুই দেশ ঠুনকো কারণে যুদ্ধে জড়াবে না। তারা এটা বুঝতে পেরেছে। এ জন্যই ৫০ বছরের বেশি সময়েও তারা যুদ্ধে জড়ায়নি।

সর্বশেষ খবর