মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সু চিকে ‘প্রাপ্য’ দিল সেনাবাহিনী!

সু চিকে ‘প্রাপ্য’ দিল সেনাবাহিনী!

সবে গণতন্ত্রের দেখা মিলছিল রোহিঙ্গাদের দেশ মিয়ানমারে। কিন্তু পার্লামেন্ট নির্বাচনে ‘কারচুপি’র অভিযোগে সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানে দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সুচি এবং দেশটির রাষ্ট্রপতিকে আটক করে। রাজধানী নেপিদোতে পার্লামেন্টে যাওয়ার সব সড়ক অবরুদ্ধ করে পাহারা বসিয়েছেন সেনা সদস্যরা -এএফপি

ধারণা ছিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘সামজে’ চললে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। তাইতো মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নিদারুণ অত্যাচার, গণধর্ষণ ও মৃত্যুযজ্ঞকে সমানতালে সমর্থন দিয়েছেন। আপসহীন গণতান্ত্রিক নেত্রীর আড়ালে সেনাবাহিনীর কুকর্মকে ইন্ধন জুগিয়েছেন। এমনকি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে সেনাবাহিনী যখন কাঠগড়ায় তখন মিয়ানমার থেকে সেই আমেরিকা, নেদারল্যান্ডসে উড়াল দিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীর সাফাই গেয়েছেন, সেনাবাহিনীকে বাঁচাতে মিথ্যাচার করেছেন! আদালতে মিথ্যার ফুলঝুরি ছিটিয়ে বলেছেন রাখাইনে কোনো গণহত্যা হয়নি। কিন্তু সেই সেনাবাহিনী তাকে ‘চরম প্রতিদান’ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। গতকাল সূর্য ওঠার আগে তাকে এবং তার প্রেসিডেন্টকে সেনা সদস্যরা আটক করে জেলে পাঠিয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মিয়ানমারে বছর দশেক ধরে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে দেশ চালাচ্ছিল সু চির রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী। কিন্তু সম্প্রতি দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সু চির দল। কিন্তু বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। যে সেনাবাহিনীর জন্য তিনি সারা বিশ্বের কাছে নির্লজ্জের মতো মিথ্যা বলেছেন। নিজের অর্জিত সারা জীবনের পুরস্কার, পদক জলাঞ্জলি দিয়েছেন। তাকেই গতকাল ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়েছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের বিচার আদালতে মামলা করে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। সেখানে শুনানির দ্বিতীয় দিনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বক্তব্য রাখেন সু চি। এদিন তিনি রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনোভাবেই গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানির সূচনা বক্তব্যে সু চি বলেন, দুঃখজনকভাবে গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যের একটি অসম্পূর্ণ, ভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করেছে। তবে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি ‘জটিল’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে, মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করে, কমপক্ষে ১৫ বছর গৃহবন্দী থেকে, শেষ পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীর কাছে কি তবে মাথানত করে দিয়েছিলেন! তাকে নিয়ে গর্ব করত যে বিশ্ব, তারা তার মুখের ওপর ঘৃণাবৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকল! তাহলে কি অর্জন করলেন সু চি!

সর্বশেষ খবর