ফের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঘেরাটোপে পড়তে চলেছে সেনা অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমার। এরমধ্যে ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চিকে আটক করে সেনাবাহিনী কোথায় রেখেছে তা জানা যায়নি। তবে সু চির দলের একজন এমপি এএফপিকে বলেন, সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট গৃহবন্দী অবস্থায় আছে। তবে তাঁদের কোথায় রাখা হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তবে দলের আরেকজন নেতা বলেছেন, তাকে নেপিডোতে তার সরকারি বাসভবনে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সু চির সরকার উৎখাতের পর মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সব ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
এর আগে তাকে কমপক্ষে ১৫ বছর গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সামরিক জান্তা জানিয়ে দিয়েছিল, তাকে কোথায় রাখা হয়েছে। তাকে রাখা হয়েছিল লেকের পাশে একটি বাড়িতে। কিন্তু এবার তাকে কোথায় রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে একেবারে নীরব সামরিক জান্তা। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সু চি রোহিঙ্গা ইসুতে নিজেকে বিতর্কিত করে তোলার পর বিশ্ব তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু তাকে ক্ষমতালিপ্সু সেনাবাহিনী ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর আবার তারাই সোচ্চার হয়েছে। বিশ্বনেতারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসি জানাচ্ছে, মিয়ানমারের সেনা ক্ষমতা নেওয়ার পর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মিয়ানমারে গণতন্ত্র নতুন যাত্রা শুরু হয় বছর দশেক আগে। তখন অবরোধ তুলে নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সোমবার যখন ইয়াঙ্গনে সু চিসহ বাকিদের গৃহবন্দী করা হয়, তার পর পরই কড়া বিবৃতি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, দ্রুত সুচিকে মুক্তি না দিলে ফল হবে মারাত্মক। তবে সেই হুঁশিয়ারির কোনো পাল্টা বিবৃতি দেয়নি বর্মী সেনা। তাদের নীরবতা পুরো বিষয়টি আরও ঘোরালো করেছে। বরং মিয়ানমারের বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের তরফে জানানো হয়, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে এক বছর পরে। তখন হবে নির্বাচন। বিবিসি বলছে, গত বছরের নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে বিপুল জয় পান অং সান সু চি। ভোটে সেনা সমর্থিত দলের তেমন সাফল্য আসেনি। এরপর সু চির দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে তাকে এবং অন্য নেতাদের আটক করেছে সেনাবাহিনী।
ওদিকে আটকের একদিন পরে গতকাল তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সু চির মুক্তি দাবি করেছে। তারা অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে নভেম্বরের নির্বাচনের ফল মেনে নিতে আহ্বান জানিয়েছে সামরিক জান্তার কাছে। এনএলডির নির্বাহী কমিটি যত দ্রুত সম্ভব সব বন্দীর মুক্তি দাবি করেছে। দলের সিনিয়র কর্মকর্তা মে উইন মিন্ট দলের ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এমন আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু তার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সেনাবাহিনী তার থাবা বসায় গণতন্ত্রের ওপর।সোমবার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন মিয়ানমার। সে দেশে থেকে গণহত্যার ভয়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশের শরণার্থীদের শিবির থেকে ফেরার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত আন্তর্জাতিক মহল।