রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ট্রাক্টর ট্রাকে রাস্তা অবরোধ

ভারতে কৃষক আন্দোলন

ট্রাক্টর ট্রাকে রাস্তা অবরোধ

দুই মাস পার হয়ে গেছে হাজার হাজার কৃষক দিল্লির উপকন্ঠে কার্যত দিল্লি অবরোধ করে রেখেছে। ভারতের নতুন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এই আন্দোলন শুরু করেছে। এরমধ্যে গতকাল আন্দোলনকারী কৃষকরা রাস্তার ওপর তাঁবু গেড়ে, ট্রাক্টর, ট্রাক ও বোল্ডার রেখে দেশজুড়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। ওই কর্মসূচির নাম ছিল ‘চাক্কা জ্যাম’। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গতকাল তিন ঘণ্টা শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে। দেশের কোনো অঞ্চল থেকে সহিংসতার খবর আসেনি। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চাক্কা জ্যাম হয় প্রধানত পাঞ্জাব ও হরিয়ানার ১৫ জেলার ৩৩টি সড়কে। সর্বত্র কৃষকদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও দিল্লিকে ওই আন্দোলনের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। এই ছাড়ের প্রধান কারণ আখ চাষ। ওই দুই রাজ্যে খেতের আখ চিনিকলে নিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখতে এই ব্যবস্থা। তা ছাড়া সরকারের দিক থেকে আলোচনার ডাক এলে কৃষকনেতারা যাতে যোগ দিতে পারেন, সেটা ছিল দ্বিতীয় কারণ। সেই ডাক অবশ্য আসেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর ভারতের ধান ও গম উৎপাদনকারী কৃষকরা প্রাথমিক প্রতিবাদ শুরু করে দিল্লির প্রান্তে জড়ো হলেও দেশজুড়ে তাদের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সেসব রাজ্যগুলোতে যেগুলো বিজেপি শাসিত নয়। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের ছাড় দিতে রাজি হলেও গত বছর পাস করা তিনটি আইন বাতিল করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। কৃষি খাতে নতুন বিনিয়োগের জন্য এসব আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়ে আসছে তারা। ভারতের দুই দশমিক নয় ট্রিলিয়ন অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশ কৃষি খাতের অবদান এবং দেশটির প্রায় অর্ধেক কর্মজীবী মানুষ এ খাতে নিয়োজিত। কিন্তু কৃষির এসব সংস্কার তাদের বড় বড় কর্পোরেট ক্রেতাদের কৃপানির্ভর করে তুলবে বলে শঙ্কা কৃষকদের। এটি ধান ও গমের মতো খাদ্যশস্যের সরকারি নির্ধারিত মূল্যের বিষয়টির অবসান ঘটাবে বলে মনে করছেন তারা।

কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদব টুইটারে বলেছেন, ‘আজ পুরো সমাজের সমর্থন কৃষকদের সঙ্গে রয়েছে। জয় নিশ্চিত।’ উড়িষ্যা ও কর্নাটকে সড়ক অবরোধ করে বসে থাকা কৃষকরা ব্যানার ও পতাকা হাতে নিয়ে কৃষি আইনবিরোধী স্লোগান দেয়। তাদের হাতে থাকা কয়েকটি প্ল্যাকার্ডে তাদের ‘শত্রুজ্ঞান’ না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থান নেওয়া প্রায় লাখো কৃষক তীব্র ঠান্ডার মধ্যে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে রাত কাটাচ্ছেন। তারা এ পর্যন্ত প্রায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে এলেও ২৫ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ট্রাক্টর র‌্যালি কর্মসূচি চলাকালে কিছু কৃষক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন।      তারপর থেকে কর্তৃপক্ষ দিল্লির আশপাশে কৃষকদের অবস্থানস্থলগুলো ঘিরে ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছে এবং তাদের রাজধানীতে প্রবেশ ঠেকাতে প্রবেশপথগুলোতে ব্যাপক সড়ক অবরোধ বসিয়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের কৃষকদের এই আন্দোলন প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। পপ তারকা রিয়ানা ও পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ কৃষকদের এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র কৃষকদের সঙ্গে ফের আলোচনা শুরুর জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

এদিকে জাতিসংঘ এই বিতর্কের মাঝে টুইট করে কৃষকদের পাশাপাশি সরকারকে সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও অনলাইন-অফলাইনে মত প্রকাশ করার অধিকার রক্ষিত হওয়া উচিত। মানবাধিকারের স্বার্থে ন্যায়সংগত সমাধানে পৌঁছানো জরুরি।

সর্বশেষ খবর