রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছেই

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেতা অং সান সু চির মুক্তি এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন

অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছেই

মিয়ানমারে সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত। গতকাল নেপিদোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিক্ষোভ করেন -এএফপি

মিয়ানমারে সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে জান্তাশাসকদের বলপ্রয়োগ বাড়ছে। রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আন্দোলনকারীদের। তারপরও টানা অষ্টম দিনের মতো দেশটিতে গণবিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেতা অং সান সু চির মুক্তি এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করছেন। গতকালও মিয়ানমারের বাণিজ্যিক নগরী ইয়াঙ্গুনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন। রাজধানী নেপিদোর সড়কগুলোর দখল নেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ দমনে রাতের আঁধারে মিয়ানমার পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা ‘রাতে অপহরণ বন্ধ করুন’ লেখা ব্যানার নিয়ে আসেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতার দখল নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তারপর থেকে ৩৫০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার জানায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, বিক্ষোভকারী এবং ভিক্ষুরাও রয়েছেন। জান্তাশাসকদের সমালোচনাকারীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ছবি ও ভিডিও দেশটির সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করছে। বিশেষ করে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শুরুতেই প্রতিবাদ জানিয়ে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া এক চিকিৎসককে আটকের ভিডিও। কাউকে কাউকে রাতের আঁধারে আটক করা হচ্ছে। অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ভাসছে নানা আলোচনা। কেউ লিখছেন, ‘আমাদের রাতগুলো আর নিরাপদ নেই’, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাতে জনগণকে অপহরণ করছে’। এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে সেনাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা সাড়া দেয়নি। রাজনৈতিক বন্দীদের বিষয়ে নজরদারি করে এমন একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিবারের লোকজন জানতেও পারছেন না কী অভিযোগে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে তাদের রাখা হবে। এমন নয় যে, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটছে। বিক্ষোভের কণ্ঠরোধ করতেই রাতের অন্ধকারে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুরো দেশজুড়েই এটা হচ্ছে।’ এদিকে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছেন দেশটির পার্লামেন্টের ৩০০ সদস্য। সংস্থার মানবাধিকার সংরক্ষণ কাউন্সিলে এই চিঠি লেখা হয়। এদিকে জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চলমান বিক্ষোভে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সরাসরি গুলি চালানোর প্রমাণ আছে। আগের দিনগুলোর ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তারা জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। আন্দোলনকারীরা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের জন্য, চীনসহ অন্যান্য দেশের দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার নাদা আল নাসিফ বলেন, ‘কঠিন লড়াইয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পর মিয়ানমার আবারও সংকটের মধ্যে পড়েছে। দেশটিতে যে অভ্যুত্থান হয়েছে, তা সাধারণ নাগরিকদের জন্য চরম বিশ্বাসঘাতকতা।’ তবে দেশের কল্যাণে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করেছে বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। রয়টার্স, আলজাজিরা।

সর্বশেষ খবর