বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সেনাবাহিনীর কোনো হুমকি কাজে আসছে না, রাস্তায় লাখো মানুষ

মিয়ানমার অভ্যুত্থান

সেনাবাহিনীর কোনো হুমকি কাজে আসছে না, রাস্তায় লাখো মানুষ

মিয়ানমারে দিনে দিনে বিক্ষোভ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সেনাবাহিনীর ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ হুমকিকে আর পাত্তা দিচ্ছে না দেশটির মানুষ। জান্তা সরকারের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে সোমবার এ যাবৎকালের অন্যতম বৃহৎ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে বার্মিজ জনগণ। ‘বিক্ষোভকারীরা তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে’- সেনাবাহিনীর এমন হুমকির পর সহিংসতার আশঙ্কা করা হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত পয়লা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে প্রতিবাদ-সমাবেশ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদকারীরা। ওই দিনই অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তাকে গৃহবন্দী করা হয়।

তার বিরুদ্ধে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখা এবং দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল তাতে যোগ দিয়েছেন সর্বস্তরের কর্মচারীরাও। বিক্ষোভকারীরা সামরিক শাসনের অবসান ও অং সান সু চিসহ এনএলডির অন্য আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করেন। ‘আমরা জান্তা শাসন চাই না। আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা নিজেরা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’ ইয়াঙ্গুনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলছিলেন একজন প্রতিবাদকারী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে, যেখানে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা মানুষকে সহিংসতার দিকে উসকে দিচ্ছে বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের, যা তাদের জীবন হারানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ বিবৃতিতে মানুষকে দাঙ্গা ও নৈরাজ্যের বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

সর্বশেষ যা ঘটল : মিয়ানমারের প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ সমাবেশসহ সেখানে বিক্ষোভকারীরা পতাকা নাড়িয়ে জান্তাবিরোধী স্লোগান দেন। রাজধানী নেপিদোয় লাখো মানুষ সমাবেশে যোগ দেয় এবং পুলিশ অন্তত ১০০ জনকে আটক করে। গণধর্মঘট কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়েছিল ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও। ২২ ফেব্রুয়ারিতে হওয়ায় সোমবারের কর্মসূচি পরিচিত পেয়েছে ‘২২২২২ বিপ্লব’ হিসেবে। আর এটিকে তুলনা করা হচ্ছে ৮ আগস্ট ১৯৮৮ সালে হওয়া মিয়ানমারের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিক্ষোভ যেটি ‘৮৮৮৮ বিক্ষোভ’ হিসেবে পরিচিত। থম্পসন চৌ, স্থানীয় গণমাধ্যম ফ্রন্টিয়ারের সম্পাদক, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে বলেন, এবারের প্রতিবাদকে তুলনামূলক বড় মনে হয়েছে তার কাছে এবং দোকানপাট বন্ধ রাখার পাশাপাশি এ সময় আরও বেশি সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকারি কোম্পানিতে যারা কাজ করেন তারা ছাড়াও ডাক্তার ও প্রকৌশলীরাও ধর্মঘট পালন করেছেন। ওদিকে মিয়ানমারের উৎখাত হওয়া সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সামরিক নেতাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে।

 

জাতিসংঘ মহাসচিব অবিলম্বে দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া, সহিংসতা বন্ধ করা, মানবাধিকারকে সম্মান করা এবং জনগণের ইচ্ছের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আধুনিক বিশ্বে সামরিক অভ্যুত্থানের জায়গা নেই।’ মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ ও অন্য কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারাও মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিয়েছে। বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ খবর