শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

লন্ডনে দূতাবাস দখল

রাস্তায় রাত কাটালেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত

মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে তুঙ্গে বিক্ষোভ। সেই উত্তাপ এবার ছড়াল বিদেশের মাটিতে। অভিযোগ, লন্ডনে মিয়ানমারের দূতাবাস দখল করেছে সামরিক জান্তার সমর্থক বার্মিজ কূটনীতিবিদরা। বের করে দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে।

গতকাল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত জ জোয়া মিন বলেন, ‘লন্ডনের দূতাবাসে কার্যত সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। জান্তার সমর্থক কূটনীতিবিদরা ভবনটির দখল নিয়েছে। সেখান থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তার বক্তব্য, সরাসরি সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্দেশ এসেছে। এই সমস্যার সমাধানে আমি ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’  তাকে দূতাবাস থেকে বের করে দেওয়ার পর বুধবার তিনি ভবনের বাইরে রাস্তায় তার গাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব দূতাবাস থেকে  ‘জোরপূর্বক বের করে’ দেওয়ার এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তবে রাষ্ট্রদূত পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তকে লন্ডন মেনে নিয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে জ জোয়া মিন সেনা অভ্যুত্থানের সমালোচনা করে অং সান সু চির মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান-বিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০০ জন মানুষ নিহত হয়েছে। যার মধ্যে শিশুও রয়েছে। জ জোয়া মিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে অভ্যুত্থান হয়েছে। এখন লন্ডনের কেন্দ্রেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে জ জোয়া মিন ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সামরিক জান্তার নিয়োগ দেওয়া নতুন রাষ্ট্রদূতকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতেও তিনি আহ্বান জানান। মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘সামরিক জেনারেলদের জন্য কাজ না করলে দূতাবাসের লোকজনকে কঠোর শাস্তি দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

দূতাবাসের লোকজনকে বের করে দেওয়ার পর তারা যাতে আবার ভবনের ভিতরে ঢুকতে না পারে সেজন্য পুলিশ ডেকে পাঠানো হয়। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে তারা এ-সংক্রান্ত নোটিস পেয়েছে এবং ‘মিয়ানমার সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে।’

এদিকে মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা দেশীয় বন্দুক ও আগুনবোমা নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর মোকাবিলা করছেন। গতকালও দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রতিবাদকারীরা তা প্রতিরোধ করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এ দিন বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। রয়টার্স জানায়, দিনের শুরুতে ছয় ট্রাক সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল তাজে নামের শহরে। বিক্ষোভকারীরা দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও আগুনবোমা দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করলে আরও পাঁচ ট্রাক সেনা মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষ অব্যাহত থাকলেও ১১ বিক্ষোভকারী নিহত ও ২০ জন আহত হন। তবে সেনা হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সোয়া দুই মাসের জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর