বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন

আচরণবিধি ভঙ্গে ২৪ ঘণ্টা নিষিদ্ধ মমতা

কলকাতা প্রতিনিধি

আচরণবিধি ভঙ্গে ২৪ ঘণ্টা নিষিদ্ধ মমতা

কলকাতায় গান্ধী মুর্তির পাদদেশে ধরনায় বসে এই ছবিটি আঁকেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা -আনন্দবাজার

আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে ২৪ ঘণ্টা নির্বাচনী প্রচারে নিষিদ্ধ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টা নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারেননি তিনি। নির্বাচন কমিশন এ নিষেধাজ্ঞা দেয়। মুসলিম ভোটারদের ভোট নিয়ে মন্তব্য করায় এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটারদের উসকানি দেওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় নির্বাচন কমিশন। সে নোটিসের জবাব দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর জবাবে সন্তুষ্ট নয় কমিশন তাই আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তাঁর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আর নির্বাচন কমিশনের সে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল কলকাতার গান্ধীমূর্তির সামনে ধরনায় বসেন মমতা ব্যানার্জি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হুইল চেয়ারে করে মেয়ো রোডে অবস্থিত গান্ধীমূর্তির সামনে পৌঁছে যান মমতা। সেখানে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নীরব প্রতিবাদ জানান তিনি। হুইল চেয়ারে বসেই দুটি ছবি আঁকতে দেখা যায় তাঁকে। যদিও মমতার সঙ্গে এ মঞ্চে দলের অন্য কোনো নেতানেত্রী উপস্থিত ছিলেন না। বিকাল ৩টা পর্যন্ত ওই ধরনামঞ্চে ছিলেন মমতা। এরপর বাড়ির দিকে রওনা দেন।

মমতার এ দিনের এ পদপেক্ষকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে শিবসেনা। টুইট করে দলের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত জানান, ‘এটা ভারতীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীন, স্বতন্ত্র সংগঠনগুলোর সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমরা বাংলার বাঘিনীর পাশে আছি।’

যদিও মমতার এ পদক্ষেপ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন ‘ধরনাও তো এক ধরনের প্রচারণা’। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এর আগে সোমবার রাতে কমিশনের সচিব রাকেশ কুমারের জারি করা নির্দেশ অনুযায়ী ওইদিন রাত ৮টা থেকে পরদিন মঙ্গলবার (গতকাল) রাত ৮টা পর্যন্ত কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কমিশনের বক্তব্য, প্ররোচনা ও উসকানি ছড়ানোর মতো ভাষণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।

কমিশনের এ সিদ্ধান্তের পরই ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল নেত্রী। টুইট করে মমতা লেখেন, ‘ভারতের নির্বাচন কমিশনের অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে কলকাতার গান্ধীমূর্তির নিচে ধরনায় বসব।’ মমতার প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতেও তুমুল শোরগোল পড়ে যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন টুইট করে লেখেন, ‘১২ এপ্রিল গণতন্ত্রের পক্ষে কালো দিন। আমরা জানি বাংলায় আমরাই জিতব।’ গতকাল চারটি নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল মমতার। কিন্তু কমিশনের তরফে রাত ৮টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকায় সে কর্মসূচিতে রদবদল করতে হয় তাঁকে। কমিশনের নিয়মানুযায়ী প্রতিদিন রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা করা যায়, সেমতো এদিন রাত ৮টায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর দুই ঘণ্টা প্রচারণার জন্য সময় পাওয়ার কথা তাঁর। ফলে সময় নষ্ট না করে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসতে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেবেন মমতা, এরপর রাতে বিধাননগরে আরেকটি জনসভায়ও উপস্থিত থাকবেন তৃণমূল নেত্রী। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে ৩ এপ্রিল তারকেশ্বরের একটি জনসভা থেকে সংখ্যালঘু ভোট-ভাগ এবং ৭ এপ্রিল কোচবিহারের একটি জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল মমতাকে। এর পরই কমিশনে নালিশ জানায় বিজেপি। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ৭ ও ৮ এপ্রিল পরপর দুই দিন নির্বাচন কমিশনের তরফে চিঠি দিয়ে শোকজ করা হয় তৃণমূল নেত্রীকে। এর জবাবও দিয়েছিলেন মমতা। যদিও মমতার সে জবাবে সন্তুষ্ট না হয়েই কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিজেপি নেতা ও হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহার বিরুদ্ধেও কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে কোচবিহারের শীতলকুচিতে সহিংসতার ঘটনা ও মানুষের মৃত্যু নিয়ে প্ররোচনামূলক মন্তব্যের অভিযোগে আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য রাহুলের নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না তিনি। রবিবার রাতে হাবড়ায় একটি নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে রাহুল সিনহা বলেছিলেন, ‘শীতলকুচিতে চারজনের বদলে আটজনকে মারা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন চারজনকে মারল তার জন্য শোকজ করা উচিত।’ এর পাশাপাশি শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে প্ররোচনামূলক মন্তব্যের অভিযোগে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে নোটিসের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এবার আট দফায় ভোট হচ্ছে। এরই মধ্যে চার দফায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ২৯ এপ্রিল শেষ দফার ভোট শেষে ২ মে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।

সর্বশেষ খবর