শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ইউরোপে প্রাণহানি ১০ লাখ ছাড়াল

ইউরোপে প্রাণহানি ১০ লাখ ছাড়াল

লকডাউন, কারফিউ, কঠোর নিয়ম- কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। গত বছরের প্রথম দিন থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ভয়ে সাহস জুগিয়েছিল টিকা এলেই চেপে ধরা যাবে করোনাভাইরাসকে। চলতি বছর ঘটা করে গোটা বিশ্বে শুরুও হয় করোনার টিকা প্রয়োগ। কিন্তু তাতেও আশার কোনো আলো আপাতত দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ইউরোপে ১০ লাখের গন্ডি ছাড়াল মৃত্যু। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানালেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর ইউরোপ শাখার আঞ্চলিক পরিচালক হান্স ক্লুগ। ফের সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘যত-ই টিকাকরণ শুরু হয়ে যাক না কেন, পরিস্থিতি এখনো যথেষ্ট ভয়ের।’ হান্স জানান, প্রতি সপ্তাহে ইউরোপে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন ১৬ লাখ মানুষ। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৫০০ জন। মিনিটে ১৬০ জন। হুর ইউরোপ শাখার আওতাধীন ৫৩টি দেশ। এর মধ্যে দুটি দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাশিয়া ও তুরস্ক। হান্স জানান, প্রথমে কিছু দেশে সংক্রমণ কমার সামান্য লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা দেখে সংক্রমণ হার কমেছে ধরে নেওয়া ভুল হবে। শুধু প্রবীণদের মধ্যে সংক্রমণ কমতে দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোর অবস্থা এখনো এক। হু কর্তা জানান, তাদের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট আসছে, আইসিইউতে জায়গা নেই। ফ্রান্সের উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, এপ্রিল মাসে এ দেশে আইসিইউতে রোগী ভর্তি সর্বোচ্চ স্তর ছুঁয়েছে। টিকাকরণ কেমন চলছে, কী পর্যায়ে রয়েছে, এসব না-ভেবে সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে যা যা করা উচিত, সেই অনুযায়ী করোনা-বিধি তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন হান্স। না-হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়তে পারে যে কোনো দিন, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ইতালি, ফ্রান্সের পাশাপাশি জার্মানির পরিস্থিতিও ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে। এ দেশের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯,৪২৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। ২৯৩টি মৃত্যু হয়েছে এক দিনে। এ নিয়ে গোটা দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়াল জার্মানিতে। মৃত্যু ৮০ হাজার ছুঁইছুঁই। অর্থাৎ মৃত্যুহার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি। প্রতি ১০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে হাজারের কাছাকাছি মৃত্যু হয়েছে জার্মানিতে। এই হিসাবে আরও এগিয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালি। ফ্রান্সে প্রতি ১০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ১৫২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ইতালিতে ১৯১৩। ব্রিটেনে ১৮৬৫। গোটা পৃথিবীতে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একাধিক মিউটেটেড স্ট্রেইন। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্রিটেনের বি.১.১.৭ স্ট্রেইন, দক্ষিণ আফ্রিকার বি.১.৩৫১ এবং ব্রাজিলের পি.১। এরা শুধু অতি সংক্রামক নয়, মারণ ক্ষমতাও বেশি বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ গোটা ইউরোপে নতুন করে সংক্রমণ-ঢেউ আছড়ে পড়ার পেছনে এই মিউটেটেড স্ট্রেইনগুলোকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ব্রিটেন অবশ্য এই পরিস্থিতিতেও লকডাউন শিথিল করেছে এই সপ্তাহ থেকে। আউটডোর ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট খুলে দিয়েছে সরকার। চালু হয়েছে জিম। তিন মাস পর খুলেছে চিড়িয়াখানা। হুর সতর্কতা উপেক্ষা করেই দেশের মানুষকে চাঙা করতে ব্রিটেনের এই পদক্ষেপ।

সর্বশেষ খবর