শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বড় সংকটে কোভ্যাক্স কর্মসূচি

বাংলাদেশ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ এই কর্মসূচির আওতায় এক ডোজ টিকাও পায়নি

বড় সংকটে কোভ্যাক্স কর্মসূচি

করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় আবারও টালমাটাল বিশ্ব। চলতি বছরের শুরুতে টিকার প্রয়োগ কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও হঠাৎ সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় সেই আশায় বড় ধাক্কা লেগেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র ভ্যাকসিনের মাধ্যমেই করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। অনেক ধনী দেশ ইতিমধ্যেই পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মজুদ করতে পারলেও দরিদ্র দেশগুলো কবে নাগাদ ভ্যাকসিন পাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। সাম্প্রতিকতম তথ্য বলছে, টিকার সরবরাহের ঘাটতির কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচিও বড় সংকটে পড়েছে। কবে এই সংকট থেকে মানব সভ্যতার মুক্তি ঘটবে তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতেই আরও ভয় বাড়িয়ে দিল কোভ্যাক্স কর্মসূচির সংকটে পড়ার বিষয়টি। করোনা মহামারী মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে সুষ্ঠু ও সমহারে টিকা বণ্টনের জন্য গত বছরের মাঝামাঝি কোভ্যাক্স কর্মসূচি শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি দেশকে চলতি বছরের শেষ নাগাদ মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ২০ শতাংশ টিকা সরবরাহ করার কথা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় আগামী মে মাস নাগাদ যে পরিমাণ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহের কথা ছিল, তার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে এ পর্যন্ত। বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটি এবং কোভ্যাক্স কর্মসূচি পরিচালনায় সহযোগিতাকারী দুই সংস্থা ইউনিসেফ ও জিএভিআই-এর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গার্ডিয়ান জানায়, টিকার এই সংকট তৈরি হয়েছে মূলত উৎপাদক দেশগুলোর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এবং ধনী দেশগুলোর টিকা মজুদের হিড়িকে।

গার্ডিয়ান জানায়, বাংলাদেশ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত এক ডোজ টিকাও পায়নি। যদিও কিছু ছোট দেশ মলডোভা, টুভালু, নাউরু ও ডোমিনিকা কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সবগুলো ডোজের সরবরাহই পেয়েছে। আর ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো বড় দেশগুলো এপ্রিল মাস নাগাদ যে পরিমাণ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার কথা, তারা পেয়েছে তার মাত্র এক-দশমাংশ। এমন আরও অনেক দেশই রয়েছে, যারা বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ বা তার কম টিকার সরবরাহ পেয়েছে।  কোভ্যাক্স কর্মসূচি সরকার ও টিকা  প্রস্তুতকারী শিল্পের সহযোগিতায় এগিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উভয় পক্ষই এই কর্মসূচিকে অগ্রাহ্য করেছে। ধনী দেশগুলো কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে অংশও নিয়েছে, আবার টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। ফাইজারের মতো টিকা উৎপাদকরা কোভ্যাক্স কর্মসূচির কাছে মুনাফাহীন টিকা বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে খুব অল্প পরিমাণেই এসব উৎপাদকের কাছ থেকে টিকা পাওয়া যাবে। তাদের সিংহভাগ টিকা কিনে নিয়েছে ধনী দেশগুলো। এদিকে মডার্নার মতো উৎপাদকরা এখন পর্যন্ত এক ডোজ টিকাও কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে সরবরাহ করেনি। কোভ্যাক্স এ পর্যন্ত ১৫৩ কোটি ডোজ টিকার সরবরাহ প্রাপ্তির চুক্তি করতে পেরেছে। এসব টিকার সিংহভাগের সরবরাহ যাওয়ার কথা ভারতের পুনেভিত্তিক টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে।

প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য টিকা উৎপাদনের শর্তে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে রয়্যালটি ছাড়া টিকা উৎপাদনের লাইসেন্স পেয়েছে। কিন্তু টিকার সরবরাহ বৃদ্ধিতে সেরাম ইনস্টিটিউট অনেকখানিই ধীর। অবশ্য তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকার কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সে দেশের সরকারের নিষেধাজ্ঞা এই ধীরগতির কারণ। এই পরিস্থিতির মধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রকট আকার ধারণ করায় ভারত সরকার টিকা রপ্তানিতে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

সর্বশেষ খবর