শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্রহ্মাণ্ডের রূপ-রসের রহস্য জানিয়েই চলেছে হাবল

ব্রহ্মাণ্ডের রূপ-রসের রহস্য জানিয়েই চলেছে হাবল

১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল। শাটল মিশন এসটিএস-৩১ দ্বারা স্পেস শাটল ডিসকভারি দিয়ে একটি টেলিস্কোপ পাঠানো হয় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে। নাম হাবল টেলিস্কোপ। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৫৯৬ কিলোমিটার উঁচুতে এর কক্ষপথে স্থান হয় টেলিস্কোপটির। তারপর এটি সক্রিয় আছে। এর মধ্যে পার হয়ে গেল ৩১ বছর। এই হাবল পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ওপর ভাসমান অবস্থায় মহাকাশের নির্ভেজাল দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করছে। এমন কিছু ঘটনা সেটির চোখে পড়ছে, যা পৃথিবী থেকে দেখা অসম্ভব। মহাকাশের এই চোখ বিশ্বব্রহ্মান্ডের লুকানো সৌন্দর্য আমাদের চোখের নাগালে নিয়ে এসেছে এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। অথচ দৃষ্টিশক্তির ত্রুটির কারণে এই মিশন প্রায় বানচাল হতে বসেছিল। এমন বিপর্যয়ের ফলে সেই টেলিস্কোপ দিয়ে শুধু অস্পষ্ট ছবি তোলা যাচ্ছিল। সৌভাগ্যবশত হাবল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যে সেটির ভুলত্রুটি মেরামত করা সম্ভব। মোট পাঁচ বার মহাকাশে সেই টেলিস্কোপে নতুন যন্ত্রপাতি লাগানো হয়েছে। এর ফলে শুধু টেলিস্কোপের আয়ু বেড়ে যায়নি, মেরামতির কাজ চালানোর সুবাদে সেটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত টেলিস্কোপ হয়ে উঠেছে। ছবির মানও উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। এই টেলিস্কোপের সাহায্যে জ্যোতির্বিদ্যার একাধিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। যেমন হাবল টেলিস্কোপের তোলা ছবি দেখে জানা গেছে, যে আমাদের বিশ্বব্রহ্মান্ড আরও দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। হাবলের কল্যাণেই জানা গেছে যে মহাকাশের বয়স ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর। হাবলের আগে মহাকাশের এত গভীরে উঁকি মারা সম্ভব হয়নি। সেই জ্ঞানের কল্যাণে গ্যালাক্সির বিকাশ আরও ভালোভাবে বোঝা গেছে। হাবল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বেশিরভাগ গ্যালাক্সির মাঝের অংশে বিশাল ভরসম্পন্ন ব্ল্যাক হোল বাসা বেঁধে রয়েছে। নক্ষত্রের জন্ম ও বিকাশ সম্পর্কেও নতুন তথ্য দিয়েছে হাবল টেলিস্কোপ। মহাজাগতিক ধুলার আড়ালে নক্ষত্রের জন্মের বিস্তারিত দৃশ্যও দেখা গেছে। বিজ্ঞানী অ্যাডউইন পি হাবল (১৮৮৯-১৯৫৩) প্রথম মহাজাগতিক বস্তুসমূহের ব্লু-শিফট আর রেড-শিফট দেখিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল; আর প্রতিটি বস্তু একটা আরেকটা থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে। আর এই প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই এই বিজ্ঞানীকে সম্মান জানিয়ে হাবল টেলিস্কোপের নামকরণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর