শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
উইঘুর নির্যাতন

চাইলেন সন্তান ফেরত, জুটল সন্ত্রাসীর তকমা

চাইলেন সন্তান ফেরত, জুটল সন্ত্রাসীর তকমা

তাদের অপরাধ তারা চীনের উইঘুরের বাসিন্দা ও মুসলমান। আর চীন সরকার জিনজিয়াং প্রদেশের ওই উইঘুর জাতিসত্তার লোকজনের ওপর দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। এ অত্যাচার থেকে বাঁচতে অনেকে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু তাদের পরিবার ও সন্তান রয়েছে চীন সরকারের বন্দীশালায়। এ অবস্থায় ভিন্ন দেশে থাকা তিনজন অভিভাবক চীন সরকারের কাছে আবেদন করেছেন তাদের সন্তানদের ফিরে পেতে। এমন মানবিক আবেদনের বিপরীতে কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এ অভিভাবকদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছে বেইজিং। গতকাল সিএনএন অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। চীনা সরকারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন তিন উইঘুর অভিভাবক। তাঁরা তিনজনই বেইজিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি চীনে থাকা সন্তান-পরিজনদের তাঁদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার সুযোগ দিতে তাঁরা দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্‌বান জানিয়েছেন। বেইজিংয়ের দমন-পীড়নের মুখে অনেক উইঘুর পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত মার্চে তেমনই দুটি উইঘুর পরিবারের গল্প উদ্?ঘাটন করে সিএনএন। উইঘুর সদস্য মামুতজান আবদুরহিম থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তানের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। জিনজিয়াংয়ে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরাও একত্রে নেই। সন্তানরা থাকছে দাদা-দাদির কাছে। আর স্ত্রীকে হয়তো কর্তৃপক্ষ আটক কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বলে তাঁর ধারণা। উইঘুর দম্পতি আবলিকিম মামটিনিন ও তাঁর স্ত্রী মিহরিবান কাদের বর্তমানে ইতালিতে থাকেন। ২০১৬ সালে তাঁরা চীন থেকে পালিয়ে যান। মিহরিবানকে জোর করে গর্ভপাত করানো হতে পারে বলে এ দম্পতির মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাঁরা তাঁদের চার সন্তান রেখেই পালাতে বাধ্য হন। কারণ পুরো পরিবার নিয়ে যাওয়াটা তাঁদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

কিন্তু এখন তাঁদের সন্তানদের ইতালিতে আসতে দিচ্ছেন না চীনা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের চার সন্তানকেই জোর করে সরকারি বন্দীশালায় রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। গত মার্চে জিনজিয়াংয়ে গিয়ে উভয় পরিবারের সন্তানদের খুঁজে বের করে সিএনএন। মামুতজানের ১০ বছর বয়সী মেয়ে মুহলিজকে যখন তাঁর মা-বাবার কথা জিজ্ঞাসা করা হয় তখন সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে বলে, ‘আমার সঙ্গে মা নেই। নেই বাবাও। আমি শুধু তাঁদের সঙ্গে পুনরায় একত্র হতে চাই।’ আবলিকিম-মিহরিবান দম্পতির এক ছেলেসন্তান ইয়েহ্যা ভিডিওকলে সিএনএনকে বলে, সে তার মা-বাবার সঙ্গে একত্র হতে চায়। রাষ্ট্রীয় এতিমখানা থেকে এ দম্পতির চার সন্তান বলে, ‘মা-বাবা! আমরা তোমাদের মিস করি।’ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে উইঘুর পরিবার দুটির অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চীন সরকারের সঙ্গে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্টা করে সিএনএন। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেননি।

উইঘুরদের প্রতি চীনা কর্তৃপক্ষের আচরণ ‘গণহত্যার’ শামিল বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে চীন।

সর্বশেষ খবর