মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনার ভয়াবহতার জন্য নির্বাচন কমিশনই দায়ী : মাদ্রাজ হাই কোর্ট

ভোট গণনা বন্ধ করার হুমকি

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতজুড়ে ভয়ংকর হয়ে উঠছে নভেল করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করল মাদ্রাজ হাই কোর্ট। গতকাল ভারতের নির্বাচন কমিশনকে তীব্র সমালোচনা করে মাদ্রাজ হাই কোর্ট বলেছে কভিড নিয়মাবলি মানা না হলে আগামী ২ মে বিধানসভা ভোট ফল গণনা বন্ধ করে দেবেন। ২ মে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু, আসাম ও পন্ডিচেরির বিধানসভা ভোটের ফল গণনা হবে। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি সজীব ব্যানার্জি ও বিচারপতি সেন্থিলকুমার রামমূর্তি এক মামলার শুনানির সময়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন, ‘আজ দেশে কভিড পরিস্থিতির যে হাল তার জন্য একমাত্র আপনাদেরই দায়ী করতে হয়।  আপনাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হওয়া উচিত। রাজনৈতিক দলকে কভিড নিয়মাবলি মানার জন্য আপনারা আপনাদের ক্ষমতার প্রয়োগ করেননি। এর আগেও আদালত আপনাদের নির্দেশ দিয়েছিল। তাও পালন করেননি।’

বিচারপতিরা নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা ২ মে  গণনার দিনের কভিড প্রোটোকল মানার নিয়মাবলি   তৈরি করে জমা দিন। আপনাদের মূর্খতার উপর নির্ভর করা যায় না।’ তাঁরা এও বলেন, ‘ভোট গণনার নামে  দেশে কভিড ছাড়নোর দায় নেওয়া যাবে না। কিভাবে করবেন। ঠিক করুন। প্রয়োজনে একদিনে না করে ধাপে ধাপে করতে পারেন। যদি না করেন, তাহলে গণনা বন্ধ করে দেব।’ মাদ্রাজ হাই কোর্ট শেষ পর্যন্ত রায় দিলে   সেটা সব রাজ্যের ভোট গণনার জন্য প্রযোজ্য হবে।   তাঁরা আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কর্মপদ্ধতি জমা দিতে বলেছেন। ঐদিন পুনরায় শুনানি হবে।

বিচারপতিরা বলেন,‘গণস্বাস্থ্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থাকে এসব মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এটাই দুঃখের।’ তামিলনাড়ুর পরিবহণমন্ত্রী এম আর বিজয়ভাস্কর গণনার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার শুনানির সময়ে হাই কোর্ট বিচারপতিরা এই মন্তব্য করেন। তাঁরা বলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময়ে দেখা গেছে নেতারা এবং জনতা নাকে মাস্ক পরেননি, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কোনো নজরদারি করেননি। বিচারপতি বলেন, ‘যখন নির্বাচনী প্রচার হচ্ছিল তখন কি আপনারা অন্য গ্রহে চলে গিয়েছিলেন? নাগরিকরা বাঁচলে তবেই তো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবে। বেঁচে থাকাটাই প্রধান। অন্য বিষয় কম গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে করোনার পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গতকাল শ্যামপুকুরের মিনার্ভা থিয়েটারে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন ‘মাদ্রাজ হাই কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আদালত পরিষ্কার জানিয়েছে যে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আমরাও বারবার এই কথাই বলে আসছি। তামিলনাড়ু, কেরালা এক দফায় ভোট হয়েছে, আসামে দুই দফায় হয়েছে আর বাংলায় ৮ দফায় করেছে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য।’ তৃতীয় দফার ভোটের সময় কভিড সম্পর্কিত পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছিল বুঝতে পেরেই দফা কমানোর জন্য আমরা চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম, কিন্তু কমিশন সেই দাবি শোনেনি।’ যদিও বিজেপির দাবি যে রাজ্যগুলোতে ভোট হচ্ছে না, সেখানেও সংক্রমণ বাড়ছে। তবে কিসের ভিত্তিতে বলা যাবে যে ভোটের জন্যই সংক্রমণ বাড়ছে?

সর্বশেষ খবর