শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন

বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরেছে আমেরিকা : বাইডেন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরেছে আমেরিকা : বাইডেন

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আমেরিকা আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব দিতে আবার স্থায়ীভাবে ফিরেছে। এ নিয়ে দ্বিধা-দ্ধন্ধের অবকাশ নেই। তিনি উল্লেখ করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায়ও যুক্তরাষ্ট্রের যথাযথ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

গত ২৮ এপ্রিল স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৬ মিনিটে শুরু করা এ ভাষণ শেষ হয় ১০টা ১১ মিনিটে। অর্থাৎ বাইডেন দীর্ঘ এক ঘণ্টা ৫ মিনিটের ভাষণে করোনায় লন্ডভন্ড যুক্তরাষ্ট্র তথা গোটা বিশ্বকে দৃপ্ত প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন।

ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘দীর্ঘ ৩০ বছর ধরেই শুধু গলাবাজি হয়েছে। অভিবাসনের ভঙ্গুর অবস্থা ঢেলে সাজাতে কেউই আন্তরিক অর্থে উদ্যোগ নেননি। এখন হচ্ছে তাকে ফিক্স করার। ১১ মিলিয়ন নথিপত্রহীন কঠোর পরিশ্রমী অভিবাসীর জন্য সঠিক দিক-নির্দেশনার সময় এটি। বিশেষ করে যারা শিশুকালে মা-বাবার হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে এবং এই দেশের আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রকেই নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করেছে, সেই ড্রিমারদের সিটিজেনশিপ প্রদানে কালক্ষেপণের অবকাশ নেই। একইভাবে কৃষি শ্রমিক এবং নানা দুর্যোগে সর্বস্বহারা অথবা দাঙ্গা-হাঙ্গামার কারণে বসতি ছাড়া মানুষদের জন্য অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, চলতি শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব কিছু ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু হাই স্কুল পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগে প্রত্যাশিত সুফল আসছে না। পাবলিক কলেজ অথবা কমিউনিটি কলেজে ব্যাচেলর ডিগ্রি পর্যন্ত ফ্রি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে। এটি সময়ের দাবি। করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা ভবন নির্মাণ, সড়ক-মহাসড়ক-সেতু নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ করতে হবে। প্রবীণ স্বজনের সেবা নিকটাত্মীয়রা যাতে করতে পারেন সে ব্যবস্থাকে স্থায়ী করতে হবে। বিরাট সংখ্যক পরিবারের শিশুরা অপুষ্টিতে বেড়ে উঠছে। দরিদ্রতার কশাঘাত থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে। এজন্য চাইল্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি সাপোর্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে। ধনীর চেয়েও ধনীদের ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়িয়ে গরিবের চেয়ে গরিবদের সার্বিক কল্যাণের প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হবে। বাইডেন উল্লেখ করেন, ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে ১০ কোটি টিকা দিতে চেয়েছিলাম। সেটি পূর্ণ হয়েছে এবং দ্বিগুণেরও বেশি টিকা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।

বাইডেন বলেন, ১০০ মিলিয়নের স্থলে ২২০ মিলিয়ন টিকা প্রদান করা হয়েছে আজ পর্যন্ত। ১০০ দিনে ১৩ লাখ আমেরিকানের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমেরিকা আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং অদম্য গতিতে সম্মুখে এগিয়ে চলছে।

বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক ভার্চুয়াল মিটিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে বাইডেন বলেন, আন্তর্জাতিক নেতৃত্বে ফেরা যুক্তরাষ্ট্র কত দিন টিকে থাকবে- এমন সংশয় প্রকাশিত হয়েছে অনেকের মধ্যে। তাদের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, আমেরিকা ফিরেছে স্থায়ীভাবে নেতৃত্বে থাকতেই।

করোনার কারণে এবার কংগ্রেসম্যান কিংবা সিনেটররা কোনো অতিথি আনতে পারেননি। মন্ত্রিপরিষদের মাত্র দুজন আমন্ত্রিত হন। সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির মধ্যে মাত্র প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্ট ছিলেন ফ্লোরে। জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক এ মিলি উপস্থিত ছিলেন সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে। ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এবং সেকেন্ড জেন্টেলম্যান ডোগ ইমহোফও কোনো অতিথি আনতে পারেননি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সামান্য সংখ্যক কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর বসেন ফ্লোরে। অন্যরা বসেন গ্যালারিতে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সচরাচর ১৬০০ জনের সমাগম ঘটে প্রেসিডেন্টের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্যের সময়। এবার মাত্র ২০০ জন ছিলেন চেম্বারে।

সর্বশেষ খবর