বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বরফ গলবে বাইডেন-পুতিন বৈঠকে

বরফ গলবে বাইডেন-পুতিন বৈঠকে

গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে পালাবদলের পর মস্কো-ওয়াশিংটন সম্পর্ক অনেকটাই তলানিতে ঠেকেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রসায়ন ভালো থাকলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সম্পর্ক তেমন বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। এমন সম্পর্কের দোলাচলের মধ্যে ১৬ জুন জেনেভায় এই দুই প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। হোয়াইট হাউস এমনটাই জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, জেনেভায় আগামী ১৬ জুন বাইডেন ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জানান, যেহেতু তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চান, তাই দুই নেতা তাঁদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

ক্রেমলিনও এ বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছে। এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন বলেছে, পুতিন ও বাইডেন কৌশলগত স্থিতিশীলতার ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। তাঁরা আঞ্চলিক দ্ধন্ধে সুরাহা নিয়ে কথা বলবেন। তাঁরা আলোচনা করবেন চলমান করোনা মহামারী নিয়েও।

আমেরিকায় সাইবার হামলা চালানো এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে বাইডেন প্রশাসন গত কয়েক মাস ধরে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রুশ কূটনীতিককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করেছে। রাশিয়া তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে তীব্র টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। মূলত সেই সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেই দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে বৈঠক বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন আশাবাদী এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতি হবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবেন। গত এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এবং তার সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনই পুতিনকে আমেরিকায় আমন্ত্রণ জানাতে বা নিজে মস্কো সফর করতে রাজি নন বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন জো বাইডেন। এই সফরে তিনি জি-৭ (এ-৭), ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক।

বাইডেন ও পুতিনের মধ্যকার আসন্ন বৈঠকের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ইতিমধ্যে আইসল্যান্ডে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে উভয় পক্ষ সম্পর্কোন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। দুই দেশের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা যাতে না বাড়ে, আসন্ন বৈঠকে তার ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই বৈঠকে আরও কিছু বিষয় আলোচনায় তুলতে চান, যেগুলো নিয়ে তিনি টেলিফোনে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণার সময়। এর মধ্যে পুতিনবিরোধী রুশ নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে আটক রাখার বিষয়টিও রয়েছে। এ ছাড়া সোলারউইন্ডসসহ যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক স্থাপনায় ধারাবাহিক সাইবার হামলার বিষয়টিও আলোচনায় উঠতে পারে। দুই সপ্তাহ আগে কলোনিয়াল পাইপলাইনে সাইবার হামলার মাধ্যমে যে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে, সে বিষয়টিও পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে তুলবেন বাইডেন। ওই হামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের এলাকাগুলোয় তেল সরবরাহের প্রায় অর্ধেক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে এতসব উত্তেজনার পরও বাইডেন বরাবরই বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার অবশ্যই একটি পথ খুঁজে নিতে হবে, যেখানে দুই দেশের মধ্যে একটি ‘স্থিতিশীল’ সম্পর্ক বজায় থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর