বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ইয়াস হামলে পড়ল, এবার ‘গুলাব’ তারপর যেসব ঝড়

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী গতকাল আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। সোমবারই নিম্নচাপ ‘ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এ নামটি দিয়েছে ওমান। জানা গেছে, এ ফারসি শব্দের অর্থ সুগন্ধি ফুলের গাছ। যা জুঁইয়ের কাছাকাছি। ‘ইয়াস’ শব্দের অন্য একটি অর্থের কথাও বলা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন এর মানে দুঃখ বা হতাশা। ইয়াসের পরে যে ঝড়টি আসবে তার নাম দেওয়া হবে ‘গুলাব’। এ নামটি ঠিক করে রেখেছে পাকিস্তান। উর্দু, ফারসি, হিন্দিতে গুলাব অর্থাৎ গোলাপ। সে গোলাপ ঝড় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড ও সংলগ্ন উপকূলীয় কিছু দেশের কোন দিকটি বেছে নেবে তা নির্ভর করছে প্রকৃতির ওপর।

গত বছর আড়াই শ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশ-ভারত উপকূলে আঘাত হেনেছিল সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। যে নাম রাখা হয়েছিল ১৭ বছর আগে! ২০০৪ সালে ঝড়ের এ নামটি দিয়েছিল থাইল্যান্ড। ‘আম্ফান’ মানে আকাশ। আরও আঘাত হেনেছিল ‘নিসর্গ’। এ ঝড়ের নামকরণ করেছিল বাংলাদেশ। আরও রয়েছে ‘গতি’ (ভারতের প্রস্তাবিত), ‘নিভার’ (ইরানের প্রস্তাবিত), ‘বুরেভি’ (মালদ্বীপ প্রস্তাবিত), ‘তৌকতাই’ (মিয়ানমারের প্রস্তাবিত)। বিশ্বজুড়ে প্রতিটি সমুদ্র অববাহিকায় যে ঘূর্ণিঝড়গুলো তৈরি হয়, আঞ্চলিকভাবে বিশেষায়িত আবহাওয়া কেন্দ্র এবং ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা কেন্দ্রগুলোর দ্বারা সেগুলোর নামকরণ হয়। ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিকাল অর্গানাইজেশন, ইউনাইটেড নেশন্স ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগর বা ডব্লিউএমও ইস্কাপের তালিকাভুক্ত দেশগুলো বিভিন্ন ঝড়ের নাম প্রস্তাব করে। এ তালিকায় রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ওমান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের নাম। এ অঞ্চলে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে এ দেশগুলোই। ২০১৮ সালে ডব্লিউএমও এবং ইএসসিএপির তালিকায় আরও পাঁচটি দেশকে যুক্ত করা হয়। এ পাঁচটি দেশ হলো ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। গত বছর নতুন তালিকায় ঘূর্ণিঝড়ের ১৬৯টি নাম ছিল। তালিকার ১৩টি দেশের থেকে ১৩টি প্রস্তাবিত নাম রয়েছে এখানে।

নামকরণের পদ্ধতি কী : সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়। যেমন প্রস্তাবিত নামটি অবশ্যই কোনো রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও লিঙ্গ নিরপেক্ষ হতে হবে। নামটি এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে তা বিশ্বের কোনো জাতি-গোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত না দেয়। আবার নামটি যেন প্রকৃতির প্রতি খুব বেশি রূঢ় বা নিষ্ঠুর না হয়। নামটি হতে হবে সংক্ষিপ্ত, সহজে উচ্চারণযোগ্য ও কাউকে গালি দেওয়ার মতো নয় এমন। নামটি সর্বোচ্চ আট অক্ষরের হতে হবে। উচ্চারণসহ নামটির প্রস্তাব করতে হবে। যদি ওপরের শর্তগুলোর মধ্যে কোনোটি পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে প্যানেল প্রস্তাবিত নামটি বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ : প্রতিটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা নাম দেওয়া হয়। কোনো অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নামকরণের ফলে সহজে ও দ্রুত ঝড়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য মনে করা যায়। এ ছাড়া নামকরণ করা হলে বেশি মানুষের মধ্য সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়। এনডিটিভি, ডিএনএ নিউজ ও দি ইকোনমিক টাইমস।

সর্বশেষ খবর