মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন

ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন

ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট জাতিকে একতাবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইয়েমিনা পার্টির এ নেতা বলেছেন, তার সরকার সব মানুষের জন্য কাজ করবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানোই নতুন সরকারের অগ্রাধিকার হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে খুব কঠিন এক জোট নিয়ে সরকার গঠন করেছেন কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত বেনেট। ডান-বাম এবং মধ্যপন্থি সাতটি দলের সমন্বয়ে এই সরকার। দলগুলো হলো ইয়ায়ির লাপিদের ইয়েশ আতিদ ও নাফতালি বেনেটের ইয়ামিনা দল ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজের মধ্যপন্থি ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট, অ্যাভিগদর লিবারমানের রক্ষণশীল ইসরায়েল বেইতেইনু, মিরেভ মিশেইলির নেতৃত্বের মধ্য-বামপন্থি লেবার পার্টি, গিদন সারের নেতৃত্বের মধ্য-ডানপন্থি নিউ হোপ পার্টি, নিৎজান হরোউৎজের বামপন্থি মেরেৎজ ও মানসুর আব্বাসের নেতৃত্বের আরব-ইসরায়েলিদের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড আরব লিস্ট এই জোটে রয়েছে। যদিও ইসরায়েলের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এই জোট কতদিন টিকবে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংকট নিয়ে নতুন এই সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।   তার সঙ্গে বেনেটের রাজনৈতিক আদর্শ, তার বিশ্বাস, ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে তার অতীতের বক্তব্য-বিবৃতি বিবেচনা করলে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ আপাতদৃষ্টিতে নেই।

বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বেনেট একসময় নেতানিয়াহুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে দুই বছর তিনি নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে অবশ্য তার সঙ্গে নেতানিয়াহুর মনোমালিন্য তৈরি হয় এবং লিকুদ পার্টি থেকে বেরিয়ে তিনি কট্টর ইহুদি দল ‘জিউয়িশ হোম’ পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০১৩ সালে প্রথম এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। তার কট্টর ডানপন্থি আদর্শ নিয়ে তার কোনো রাখঢাক নেই। বিভিন্ন সময় তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহুর চেয়েও তিনি বেশি ডানপন্থি। উদারপন্থি ইহুদিদের সুযোগ পেলেই উপহাস করেন। অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করা গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের স্থায়ী কর্তৃত্ব এবং সার্বভৌমত্ব কায়েমের পক্ষে বেনেট। কট্টর ইহুদিদের মতো তিনি বিশ্বাস করেন, ঐতিহাসিকভাবে এসব এলাকা ইসরায়েলের এবং সে কারণে পশ্চিম তীরকে তিনি সবসময় হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত ‘জুদেয়া-সামারিয়া’ নামে অভিহিত করেন।

পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের কট্টর সমর্থক তিনি। একসময় তিনি ইহুদি বসতি-স্থাপনকারীদের সংগঠন ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। তাকে মানুষ চেনে ‘বসতি-স্থাপনকারীদের নেতা’ হিসেবে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী তিনি। বিভিন্ন সময় তিনি ফিলিস্তিন সমস্যাকে ইসরায়েলের ‘পশ্চাৎদেশের ওপর বিষফোঁড়া’ বলে বর্ণনা করেছেন। যে সাতটি দলের জোটের শরিক হিসেবে বেনেট প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেখানে ইসলামপন্থি একটি আরব দল ছাড়াও মেরেতজের মতো বামপন্থি দল রয়েছে, যারা পশ্চিম তীরে ইহুদি দখলদারিত্বে ঘোর বিরোধী। জেরুজালেমে সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক হারিন্দার মিশ্র মনে করেন, ক্ষমতায় গিয়ে শরিকদের সঙ্গে আপস করা ছাড়া হয়তো কোনো উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি হোক বা ইসরায়েলে সমকামীদের অধিকারের প্রশ্ন হোক- যে কোনো ইস্যুতেই জোটের শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হবে। কিন্তু সরকার টিকিয়ে রাখতে যে আপস করতে হবে, তা তারা সবাই অনুধাবন করে। তিনি আরও বলেন, প্রথমত বেনেট এবং শরিকরা জানেন তাদের ভিতর মতপার্থক্য চরমে গেলে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফিরে আসবেন। ফলে সেই ভয়েই তিনি আপস করবেন বলে আমার ধারণা।

ক্ষমতা থেকে নেতানিয়াহুর প্রস্থান এবং ক্ষমতায় বেনেটের আগমনকে ফিলিস্তিনিরা কীভাবে দেখছে সে প্রসঙ্গে হারিন্দার মিশ্র বলেন, ফিলিস্তিনিরা এখন মনে করে, ইসরায়েলে ক্ষমতার রদবদলে তাদের ভাগ্যের কোনো বদল হবে না। তবে, আরব-মুসলিম একটি দলের (মানসুর আব্বাসের ইউনাইটেড আরব লিস্ট) সমর্থন পেতে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি আরব নাগরিকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কিছু সমঝোতা হয়েছে। আরব শহরগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং সেই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের অনুমোদনহীন বাড়ি ভাঙা বন্ধ রাখার চুক্তি হয়েছে। হারিন্দার মিশ্র বলেন, সাধারণ ফিলিস্তিনিরা মনে করছে, নতুন সরকার অন্তত মন্দের ভালো হতে পারে। তাদের জীবনমানের কিছু উন্নতি হয়তো হবে।

সর্বশেষ খবর