বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সবার দৃষ্টি জেনেভার দিকে

বরফ কি গলবে বাইডেন-পুতিন সাক্ষাতে

সবার দৃষ্টি জেনেভার দিকে

জি-৭ সম্মেলন, এরপর ন্যাটো সম্মেলন। গত ছয় দিন ধরে গোটা বিশ্বে সংবাদপত্রের শিরোনামের বিষয়বস্তু। তবে এগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে আজ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠক। গত বৃহস্পতিবার থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউরোপ সফর শুরু হয়েছে। আজ বৈঠক চিরবৈরী দুই দেশের নেতার মধ্যে। কিন্তু এ বৈঠক থেকে কি ভালো কোনো বার্তা আসবে বিশ্ববাসীর জন্য। রাশিয়া সম্প্রতি তাদের ‘অবন্ধু-সুলভ দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের নাম যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয় দেশই বলছে, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এখন প্রায় তলানিতে নেমে এসেছে। রাশিয়া এবং আমেরিকা- এ দুই দেশে তাদের কোনো রাষ্ট্রদূত নেই। ঊর্ধ্বতন রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে নানা কারণে। রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নিজ দেশভুক্ত করেছে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষিপ্ত। তাছাড়া অন্য দেশের নির্বাচনে রাশিয়া নাক গলায়, এমন অভিযোগেও কিছু নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দুজন সাবেক মার্কিন মেরিন সেনা এখন রুশ কারাগারে বন্দী। দুই দেশের এই বৈরী সম্পর্কে আরও যুক্ত হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের একটি মন্তব্য। গত মার্চে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সঙ্গে একমত হন যে, ভøাদিমির পুতিন আসলে ‘একজন খুনি’। কিন্তু এত কিছুর পরও এ দুজন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রথম মুখোমুখি হবেন। অবশ্য রাশিয়ার কিছু মানুষ এটাকেও এক বড় অর্জন বলে মনে করেন।

মর্যাদার প্রশ্ন : মস্কোর একটি থিংক ট্যাংক রিয়াকের পরিচালক আন্দ্রে কুর্টানভ বলেন, ‘প্রতীকী তাৎপর্যের কথা বিবেচনা করলে এ শীর্ষ বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ; এটি রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে এক কাতারে স্থান দিচ্ছে। পুতিনের কাছে এ প্রতীকী ব্যাপারটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ এ বৈঠকটি হচ্ছে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হোয়াইট হাউসে আসার পর একেবারে প্রথম পর্যায়ে এবং তার প্রথম বিদেশ সফরের সময়। তিনি নিজেই এরকম একটি বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন। এগুলো কিন্তু ভøাদিমির পুতিনের জন্য বোনাস পয়েন্ট। আর এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শীর্ষ বৈঠক, অন্য কোনো অনুষ্ঠানের ফাঁকে কোনো সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ নয়।

পুতিন এবং বাইডেনের বৈঠকটি হচ্ছে জেনেভায়। তাদের বৈঠকের জন্য জেনেভাকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্নায়ুযুদ্ধের সময় ১৯৮৫ সালে আরেকটি শীর্ষ বৈঠকের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেই বৈঠকে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যান এবং সোভিয়েত নেতা মিখাইল গরবাচেভ। কিন্তু এমন সম্ভাবনা খুবই কম যে এ সপ্তাহের শীর্ষ বৈঠকটি সেই বৈঠকের মতো কিছু হবে। রেগ্যান এবং গরবাচেভ যেভাবে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক স্থাপন এবং রাজনৈতিক বরফ গলাতে সক্ষম হয়েছিলেন, পুতিন-বাইডেন বৈঠক থেকে সেরকম কিছু আশা করা হচ্ছে না। হোয়াইট হাউস বলছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে একটি স্থিতিশীল এবং অনুমানযোগ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু পুতিনের কাজের ধারা একেবারেই ভিন্ন। তিনি ২০১৪ সালে যখন সৈন্য পাঠিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নিলেন, এ অঞ্চলটিকে নিজ দেশের অন্তর্ভুক্ত করলেন, তখন থেকে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। তিনি এরপর কী করবেন, সেটা কেউ অনুমান করতে পারছেন না।

কী আলোচনা হবে : জেনেভায় বাইডেন ও পুতিনের মধ্যকার বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তার কিছুটা আভাস উভয় পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে রয়েছে সাইবার হামলা, মানবাধিকার, ইউক্রেন, বেলারুশ প্রভৃতি প্রসঙ্গ।

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উভয় দেশের প্রেসিডেন্ট আলোচনা করবেন। তাঁরা আলোচনা করবেন কৌশলগত স্থিতিশীলতার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে। বিভিন্ন আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের উপায় নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন। করোনা মহামারী মোকাবিলাসহ আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে তাঁরা বৈঠকে আলাপ করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর